সাধারণত ঈদুল আজহার সময় মসলার দাম হঠাৎ বাড়লেও পরে তা কমে যায়। কিন্তু এবার জিরার দাম লাফিয়ে বাড়লেও কমেনি, উল্টো বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে মান ভেদে এক কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত। এক মাস আগেও ৮০০ টাকা থেকে ৮৬০ টাকায় এ মসলা মিলত। আর এক বছর আগে এর কেজি ছিল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ এক বছরে পণ্যটির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
রাজধানীর কদমতলী এলাকার খুচরা বিক্রেতা মো. মিলন হোসেন জানান, বর্তমানে পাইকারি বাজারে জিরার কেজি ৯৬০ থেকে ৯৮০ টাকা। ফলে খুচরায় ১১০০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে এক কেজি জিরা ৮০০ টাকাতেও বিক্রি করেছি। ঈদের বাজারে বিক্রি করেছি ৯০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।’
জিরা মূলত আমদানিনির্ভর মসলা। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় আমদানি কমে যাওয়ায় দাম অনেক.বেড়ে গেছে।
মালিবাগ বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সিরাজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সব মসলার দামই বেশি। জিরার দাম লাফিয়ে বাড়ছে। ৪৫০-৫০০ টাকার জিরা এখন হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে কম করে কিনছি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে জিরা আমদানি হয় ৩২ হাজার ৯৩ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আসে ৪০ হাজার ১৯৯ টন। বছরের ব্যবধানে আমদানি কমেছে ৮ হাজার ১০৬ টন।
বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েতউল্লাহ বলেন, ‘ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলার-সংকটে এলসি খোলা কমে গেছে। আমদানিতে খরচও বেড়েছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদার সিংহভাগ জিরা আসে ভারত থেকে। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিশর থেকেও আমদানি হয়। ভারত ছাড়া বাকি দেশগুলো থেকে আমদানি তলানিতে ঠেকেছে। তাই ভারতের জিরার ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, আমদানি কমে গেলেও পণ্যের সংকট প্রকট নয়। কিন্তু আমদানিকারকরা দাম বেশি বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌলভীবাজারের এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যা হওয়ায় আমদানি কমেছে। কিন্তু যারা আমদানি করতে পেরেছে, তাদের কাছে মসলা মজুদ আছে। তারাই মূলত দাম বেশি বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। খুচরায় গিয়ে তা আরও বাড়ছে।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বর্তমানে জিরার কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে দাম ছিল ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকা এবং গত বছরের এই সময়ে বাজারে প্রতিকেজি জিরার দাম ছিল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। টিসিবি ও বাজার চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পণ্যটির দাম এক মাসে ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ১৪০ দশমিক ৯৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।