এক যুগ পর লাতিন-ইউরোপ মুখোমুখি

Slider খেলা গ্রাম বাংলা টপ নিউজ সারাবিশ্ব

footbal
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: প্রত্যাশা ছিল স্বপ্নের ফাইনাল। মানে  ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের ১৯ আসরেও এই দুই সেরার ফাইনাল দেখেনি বিশ্ব। সব প্রত্যাশা পূরণ হয়। আর স্বপ্ন যদি শেষ হয় দুঃস্বপ্নে তবে তো কথাই নেই। কিন্তু আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল পুরো অঞ্চলের কোন প্রতিনিধি না থাকার। লাতিন আমেরিকাই নয় শুধু, বিশ্বকাপের ইতিহাসে দুই আমেরিকা মিলিয়ে সাত বার আয়োজিত বিশ্বকাপে কোন ইউরোপিয়ান দলই শিরোপা জিততে পারেনি। এর আগে লাতিন আমেরিকায় বিশ্বকাপ হযেছে ১৯৩০, ১৯৫০, ১৯৬২ ও ১৯৭৮। এ কয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যথাক্রমে উরুগুয়ে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। আর মেক্সিকোতে ১৯৭০ এ ব্রাজিল আর ১৯৮৬ তে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতে। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শিরোপা জিতে ব্রাজিল। উরুগয়ে যে দু’বার শিরোপা জিতে সে দু’বার প্রতিপক্ষ ছিল যথাক্রমে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। আর বাকি পাঁচ বারই লাতিন দেশের প্রতিপক্ষ ছিল ইউরেপিয়ান কোন দল। ১৯৬২তে চেকস্লোভাকিয়া, ১৯৭০ এ ইতালি, ১৯৮৬ তে পশ্চিম জার্মানি আর ১৯৯৪ এও ইতালি ফাইনালে হার মানে। এবার অষ্টমবারে দ্বিতীয়বারের মতো আর্জেন্টিনা-জার্মানি মুখোমুখি। মজার ব্যাপার হলো এ অঞ্চলে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছে ইতালি দু’বার আর আর্জেন্টিনার মুখোমুখি জার্মানরা দু’বার। আর ইউরোপে আর্জেন্টিনা-জার্মানি ১৯৯০ এ আর এশিয়ায় ২০০২ এ ব্রাজিল-জার্মানি মোকাবিল হয়েছে একবার। বিশ্বকাপে গত দু’আসরে লাতিন ঝাঁজ উধাও হয়ে গিয়েছিল ইউরোপিয়ানদের দাপটে। ২০০৬-এ জার্মানি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে ইতালি আর ফ্রান্স। আর ২০১০এ দক্ষিণ আফ্রিকা আসরে স্পেন আর নেদারল্যান্ডস খেলেছে ফাইনাল। এ আসরে অবশ্য উরুগুয়ে লাতিনদের প্রতিনিধি হিসেবে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। এক যুগ পর আবার ফাইনালে লাতিন-ইউরোপ মুখোমুখি। আর্জেন্টিনার সংগঠিত ও ছন্দময় ফুটবলের মোকবিলায় জার্মানির দুরন্ত গতির ফুটবল। আর্জেন্টিনা আগে ঘর বাঁচায় পরে আক্রমণ। জার্মানরা ঘর থেকে শুরু করে আক্রমণ। লম্বা পাসে প্রতিপক্ষের সীমানায় ঢুকে যায় তেড়ে ফুরে।
মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। এটাই নিয়তির পরিহাস। ব্রাজিল এত বড় ব্যবধানে হারবে কে ভেবেছিল? কোন পাগলও নয়। তবে ব্রাজিলের অবস্থা দেখে অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন আর্জেন্টিনাও বোধহয় নেদারল্যান্ডসের কাছে পাত্তা পাবে না। কারও কারও ধারণা ছিল হারের ব্যবধানটা বড় হলেও হতে পারে। বাংলাদেশের এক প্রবীণ সাংবাদিক যিনি এ দেশের সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ কাভার করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তিনিও আগের দিন রাতে বলেছেন, “আমি বললাম; লিখে রাখুন আর্জেন্টিনা আজ হারবে। আমি নিজে আর্জেন্টিনার সমর্থক, তবু বলছি আর্জেন্টিনা পারবে না।” কিন্তু বাস্তবতা হলো, আর্জেন্টিনা জিতেছে এবং ফাইনালে খেলবে। লাতিন ইউরোপের ঝা-াটা এখন আর্জেন্টিনার হাতে। তারা না পারলে ইজ্জত থাকতো না এ অঞ্চলের। প্রথম দিকে বেশ দাপট লক্ষ্য করা গেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাই ঝরে পড়েছে। টিকে রয়েছে কেবল আর্জেন্টিনা। এর আগে আমেরিকা অঞ্চল থেকে কোন ইউরোপিয়ান দেশ বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। এবার কি হয় তা দেখার অপেক্ষায় সবাই।
নেদারল্যান্ডসের খেলা দেখে অনেকের ধারণা ছিল তাদের পরিশ্রমী ফুটবল আর শক্তির সামনে আর্জেন্টিনার টিকে থাকা কঠিন হবে কিন্তু তা আর হয়নি। আর্জেন্টিনা যোগ্য দর হিসেবেই জিতেছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। সমান তালেই তারা লড়েছে ডাচদের সঙ্গে। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার আক্রমণ সামলাতেই বেশি ব্যস্ত ছিল ডাচরা। তবে আগের দিনের খেলা দেখে দুই কোচই যেন শিষ্যদের বাড়তি সচেতন করে দিয়েছিলেন। ফলে মাঝে মধ্যে দেখা যায় রক্ষণাত্মক খেলতে। মাঝ মাঠ থেকে বল নিজেদের গোলরক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য ব্রাজিলের মতো তাড়াহুড়ো না করে আক্রমণ সাজানোর চেষ্টা করেছেন তারা।
আগের রাতেই অমন গোলের বন্যা দেখার পর দ্বিতীয় সেমিফাইনালটা কেমন যেন নিসপ্রাণ দেখাচ্ছিল। কিন্তু এত বড় মঞ্চে এটাই খেলার সঠিক চরিত্র বলতে হবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজের ডিফেন্সের দরজা খুলে রেখে আক্রমণে যাবে কেন। আর বিপক্ষ সেই সুযোগে প্রতি আক্রমণে একের এক গোল তুলে নেবে! ব্রাজিলের  মতো ভুল আর্জেন্টিনা করেনি, নেদারল্যান্ডসও নয়। দু’দলই প্রথমার্ধে এত কম ডাইরেক্ট পাস খেলেছে যে, ফাউলের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। পঁয়তাল্লিশ মিনিটে দু’টো দল মোটে একটা করে কর্নার পেয়েছে। প্রথমার্ধের পরে তবু খেলার গতি খানিকটা বেড়েছিল। ম্যাচটা দেখলে মনে হতেই পারে যে, বিপক্ষের প্রচ- গতির সঙ্গে আগের দিনের ব্রাজিলের মতো অহেতুক সমান তালে পাল্লা না দিয়ে আর্জেন্টিনা বুদ্ধি করে খেলাটার গতি কমিয়ে দিয়েছে। বল আটকে রেখে তারা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে। বেশি করে স্কয়ার পাস খেলেছে। এতে নেদারল্যান্ডস শিবিরের অনেকে সমালোচনা করেছেন। তারা এটাকে নেতিবাচক ফুটবল বলেছেন। কিন্তু কিছু করার নেই। ভাল খেলে হেরে যাওয়ার মানে নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *