মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখলো আফগানিস্তান। আগের ম্যাচে যেখানে উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ২৫৬ রান, সেখানে আজ টিকে থাকাই যেন বড় দায়। একের পর এক আঘাতে আফগানরা আজ এলোমেলো, অসহায়।
হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা নিয়ে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে টসে হেরে আগে বল করতে গিয়ে আফগানিস্তানকে থামিয়ে দিয়েছে ১২৬ রানে। এবার ব্যাট হাতে জ্বলতে পারলেই পাবে পূর্ণতা।
গল্পটা এভাবেও বলা যায়, ‘শরিফুল ইসলাম ফিরলেন, ফিরলো বাংলাদেশও।’ প্রথম দুই ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণের পর ছন্দ খুঁজে পেলো বাংলাদেশ। উড়তে থাকা আফগানিস্তান মাটিতে নেমে এলো। চট্টগ্রামে আগে ব্যাট করতে এসে পাওয়ার প্লেতে যোগ করে মোটে ২১ রান, তবুও ৪ উইকেট হারিয়ে! যার নেপথ্য কারণ শরিফুল। একাই ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি; প্রথম স্পেল ৫-১-৮-৩!
পাওয়ার প্লেতে আফগানদের ২১ রানের ভেতরে ৭ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। তাছাড়া ৬০ বল খেলে মোটে ৮টি বল থেকে রান বের করতে পেরেছে তারা, ডট দেয় ৫২টি! এই ছোট পরিসংখ্যানই বলে দেয় কতটা ভুগেছে আজ সফরকারীরা।
আগের ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে ২৫৬ রান তুলেছিল সফরকারী আফগানিস্তান। আজও ভয় ছিল এমন কিছু হবে না তো! সেই সুযোগও দেননি শরিফুল। মাত্র তৃতীয় ওভারেই ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। অফ স্টাম্পের বাইরে ফাঁদে ফেলেন ইবরাহিম জাদরানকে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বলে খোঁচা দিলে তা সরাসরি চলে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৩ রানেই ভাঙে আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি।
প্রথম উল্লাসের রেশ না কাটতেই দ্বিতীয়বার উল্লাসে মাতান শরিফুল। একই ওভারেই ফেরান তিনে না রহমত শাহকে। শূন্য রানে ফেরেন এই আফগান ব্যাটার। তিনিও ফেরেন মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আর তাতে ৩ রানেই ২ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
এরপর ষষ্ঠ ওভারে তাসকিনের আঘাত। প্রথম চার বল ডট দেয়ার পর পঞ্চম বলে পুল করতে চেয়েছিলেন গুরবাজ। তবে তাসকিনের বাউন্সার ব্যাটে ছোঁয়া লেগে চলে যায় পেছনে, মুশফিকের গ্লাভসে। আগের ম্যাচে ১৪৬ রানের ইনিংস খেলা গুরবাজ আউট হন ২২ বলে ৬ রান করে।
এরপর টিকে থাকার লড়াইয়ে দাঁতে দাঁত চেপে থাকে আফগানিস্তান। একটু থিতু হতে একের পর এক দিতে থাকে ডট। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি, মোহাম্মদ নবিকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শরিফুল। মোটে ১৫ রানে ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
১১তম ওভারে ইনিংসে প্রথমবারের মতো এসেছেন মেহেদী মিরাজ। পরের ওভারে আনা হয়েছে সাকিব আল হাসানকেও। তবে চাপ সামলে উঠতে পারেনি সফরকারীরা। এই দুই স্পিনারকেও স্বাভাবিকভাবে খেলতে পারেনি। তবুও নাজিবুল্লাহ-শাহিদি জুটি খানিকটা ফুসরত খুঁজে নিয়েছিল ৪৬ বল থেকে ১৭ রান বের করে।
তবে এবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ২২ বলে ১০ রান করেন তিনি। হাশমতুল্লাহ শাহিদি ফেরেন আরো ২১ রান যোগ করে। তিনিও ধরাশায়ী হন স্পিনে, তাইজুলের শিকার হয়ে ফেরেন ২২ রান করে।
এরপর ফের শরিফুলের আঘাত। দ্বিতীয় স্পেলে এসেই ফেরান অভিষিক্ত আব্দুল রহমানকে। ৬৮ রানে ৭ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে একাই লড়তে থাকেন আজমতুল্লাহ ওমরজাই। আরেক অভিষিক্ত জিয়াকে নিয়ে অষ্টম উইকেট জুটিতে ৫৩ বলে ২১ রান যোগ করেন ওমরজাই। জিয়া আউট হন ৩০ বলে ৫ রানে।
ওমরজাইয়ের ব্যাটে ভর করেই তিন অংকের ঘরে পৌঁছায় আফগানিস্তানের ইনিংস। নিজেও তুলে নেন অর্ধশতক। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হবার আগে ৭১ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তাকে ফেরান তাসকিন। এত আগে ৩৪ বলে ১১ করে তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার হন মুজিবুর। ৪৫.২ ওভারে ১২৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান।
সাকিবের আজকের বোলিং ফিগার ১০-১-১৩-১, ৬০ বলের ৪৮ বলই করেছেন ডট বল। ইকোনমি ১.৩। তবে দলের সবচেয়ে সফলতম বোলার শরিফুল ইসলাম। ৯ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। তাসকিন ২৩ রানে ২ ও তাইজুল নেন ৩৩ রানে ২ উইকেট। অন্যটি যায় মিরাজের ঝুলিতে।