ঢাকা: আইসিটি খাতে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ ও সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়ার বিধান রেখে ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০১৫’ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার (০৬ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়।
পাশাপাশি আইসিটি খাতের মাধ্যমে নাগরিক সেবার মান বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাও নেওয়া হবে।
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আইসিটি নীতিমালা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর মন্ত্রিসভা সেটি পর্যবেক্ষণসহ অনুমোদন দেয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, সংশোধিত নীতিমালায় মন্ত্রিসভা সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
নীতিমালায় একটি ভিশন, ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৪টি কৌশলগত বিষয়বস্তু এবং ২৩৫টি অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। কর্মপরিকল্পনা থাকায় নীতিমালা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে সুবিধা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
কর্মপরিকল্পনা তিন মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের মধ্যে স্বপ্লমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। তবে এর কিছু কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের মধ্যে মধ্যমেয়াদী এবং ২০২১ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।
নীতিমালায় আগে ৩০ বছরের ভিশন থাকলেও এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালকে একটা মাইলস্টোন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ওই সময়ের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল করার ভিশন।
রূপকল্পের বর্ণনায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইসিটির সম্প্রসারণ ও বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা, দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি, সামাজিক ন্যায়পরায়নতা বৃদ্ধি, সরকারি ও বেসরকারিখাতের অংশীদারিত্বে সুলভে জনসেবা দেওয়া এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করা।
ইতোমধ্যে দেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চাই।
সামাজিক ন্যায়পরায়নতা, নীতির প্রতি দায়বদ্ধতা, সার্বজনীন প্রবেশযোগ্যতা, শিক্ষা ও গবেষণা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রপ্তানি উন্নয়ন, আইসিটি সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করাই নীতিমালার উদ্দেশ্য।
নীতিমালায় কিছু প্রণোদনার বিষয় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আইসিটি খাতে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় উৎসাহ দিতে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ ও সহজ শর্তে স্বপ্ল সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়া, ডেটা সংযোগের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতিতে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট ও শুল্ক নির্ধারণ করা। এটা মাথায় রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অর্থবিল আইনের খসড়া তৈরি করবে।
এছাড়া পুরাতন পিসি ও আইসিটি যন্ত্রপাতি থেকে মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ করে পুর্নব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করা, এটা মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
নীতিমালায় তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো হালনাগাদ করা হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৩ লাখ, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪ কোটি ৭৪ লাখ। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ২৭৫টি।
এর আগে ২০০৯ সালে প্রণীত নীতিমালা হালনাগাদ করে আইসিটি বিভাগ স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে ২০১১ সালের ১১ মার্চ মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসে।
নীতিমালায় কীভাবে, কী প্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহার হবে তার দিকদর্শন রয়েছে বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।