ময়লা-আবর্জনার নগরী ময়মনসিংহ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৭ লাখ মানুষ

Slider গ্রাম বাংলা


ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের এককালের পরিচ্ছন্ন নগরী ময়মনসিংহ এখন ধুলোবালি আর ময়লা-আবর্জনার নগরী। বছরজুড়ে উন্নয়ন কাজের নামে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট কাটাছেড়া করার কারণে নগরবাসীর এখন দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। তার ওপর ড্রেনের নোংরা ময়লা ও কাদামাটি তুলে রাস্তার ওপর দিনের পর দিন ফেলে রাখায় তা শুকিয়ে গোটা শহর জুড়ে উড়ছে ধুলোবালি। যানবাহনের কালো ধোঁয়ার সঙ্গে এই বিষাক্ত ধুলোবালি বাতাসে মিশে একাকার হচ্ছে প্রতিদিন। একদিকে উৎকট দুর্গন্ধ, অপরদিকে ময়লাযুক্ত ধুলোবালির কারণে নগরীর ৭ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট ও চর্মসহ নানা রোগে।

নগরীর চরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আতিকুর হাসান মাসুম বলেন, ঐতিহ্যবাহী শহর হিসেবে সারাদেশে ময়মনসিংহের রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। কিন্তু এই শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নোংরা, ময়লা-আবর্জনা ও ধুলোবালি। এই সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনসহ সিটি কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত।

শহরের আকুয়া হাবুল বেপারি রোডের গৃহবধূ শবনম জানান, দেশের বিভিন্ন শহরের তুলনায় ময়মনসিংহ শহর বেশি নোংরা। ঘর থেকে বের হলেই শহরের মোড়ে মোড়ে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে।

কেওয়াটখালী এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী আনারকলি বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা করে কলেজে যাওয়ার সময় ধুলোবালি ও ময়লা-আবর্জনার জন্য নাক-মুখ কাপড় দিয়ে চেপে ধরে যেতে হয়। শহরের ধুলোবালি নাকে-মুখে যাওয়ায় কারণে আমার মা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

প্রথম শ্রেণীর মর্যাদার ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ৯১ দশমিক ৩১৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের। ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক, পানি সরবরাহের উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের কাজ চলছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। এজন্য শহরের প্রতিটি ড্রেন ও রাস্তাঘাট কাটার মহোৎসব চলছে। এর সঙ্গে টেলিফোন ও গ্যাস লাইন সংযোগের জন্য শহরের রাস্তাঘাট কাটা তো আছেই। এসব কাজের জন্য বালি, পাথরসহ নানা নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয় রাস্তার ওপর। দিনের পর দিন রাস্তার ওপর পড়ে থাকা এসব নির্মাণসামগ্রী ও ড্রেনের ময়লাযুক্ত কাদামাটি ফেলে রাখার কারণে রোদে শুকিয়ে ধুলোবালি বাতাসে উড়ছে গোটা শহরজুড়ে। শহরের মাঝখান দিয়ে দিনভর চলাচলকারী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের কালো ধোয়ার সঙ্গে এই ধুলোবালি মিশে একাকার থাকছে শহর। পানি না ছিটানোর কারণে এসব দূষিত ধুলোবালি নগরবাসীর নাকে-মুখে ঢুকছে সহজেই। ধীরগতির এই কাজের জন্য নগরবাসীসহ ব্যবসায়ী ও পথচারীদের এখন নাভিশ্বাস উঠেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ধুলোবালির কারণে মানুষের শ্বাসকষ্ট থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষ্যব্যাধি বিভাগের প্রধান ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, দেশের মধ্যে ময়মনসিংহ হচ্ছে অ্যাজমাটিক জোন। আর ধুলোবালিই এর প্রধান কারণ। শহরের ধুলোবালির কারণে হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট ও চর্ম রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শহরকে ধুলোবালি আর ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাসের কথা জানিয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামূল হক টিটু জানান, উন্নয়ন কাজের সময় নগরবাসীকে একটু অসুবিধা মেনে নিতেই হবে। সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নয়নে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে শহরবাসীকে আর কষ্ট করতে হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *