মাসুদ রানা সরকার, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি:– বগুড়ায় কয়েকদিনের ব্যবধানে ৪’শ টাকায় ঠেঁকেছে বাজারে আদা ও কাঁচামরিচের দাম। কিন্তু কেন এই অস্থিতিশীলতা এর উত্তর খুঁজতে বাজার মনিটরিং এ এসে চক্ষু চড়কগাছ ভ্রাম্যমান আদালতের। গত বুধবার, ২৯ জুন বগুড়া রাজাবাজার ও ফতেহআলী বাজারে জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে আকষ্মিক অভিযান পরিচালনা করেন বগুড়া জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত যেখানে দেখা যায় আমদানিকারকদের কাছ থেকে খরচসহ ১৯০ টাকা কেজিতে আদা কিনে তা বগুড়ার বাজারে আড়ৎদাররা পাইকারি বিক্রি করছে ৩২০ টাকায় যা খুচরা ব্যবসায়ীদের হাত ধরে ভোক্তা পর্যায়ে কিনতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। দামের এই আকাশ পাতাল পার্থক্যের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি আড়ৎদাররা উল্টো ম্যাজিস্ট্রেটের সাথেই তর্কে জড়িয়ে পরেন তারা।
তবে আড়ৎদার ও কমিশন এজেন্ট ব্যবসায়ীরা যেটি বলছেন আদার প্রতি বস্তায় ময়লা ও উচ্ছিষ্ট অংশ প্রায় ৪/৫ কেজি বাদ দিতে হয়। এছাড়াও আদার কোন নির্দিষ্ট দাম বেঁধে দেওয়া থাকে না। আমদানি কম আর ভোক্তা চাহিদা বেশি থাকলে দাম আপনা আপনি বেড়ে যায়। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন আমাদানিকারকদের চাপে দামের এমন অবস্থা ভ্রাম্যমান আদালতে জানান তারা।
এদিকে বগুড়ার বাজারের ব্যবসায়ী নেতারাও যেন নিরব ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। তারা যেটি বলছে আড়ৎদাররা চাইলে আরো কম দামে বিক্রি করতে পারতো কিন্তু বেশি লাভের আশায় তারা এই কাজ করছে তবে তা তাদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
এদিকে খুচরা বাজারে চলছে আরেক ইচ্ছাস্বাধীন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। কোন ব্যবসায়ীর কাছে নেই পণ্য ক্রয়ের রশিদ কিংবা সঠিক মূল্যতালিকা। গতকালের পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ ছিলো ৩০০ টাকা যা একরাতের ব্যবধানে বেড়েছে ৬০ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। এদিকে আদার বাজারও একই অবস্থা পাইকারিতে ৩২০ টাকা কিনে কেজি প্রতি ৮০ টাকা লাভে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছে তারা । তাদের কাছেও দাম নিয়ে কোন সদুত্তর! বগুড়া রাজাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, তারা প্রতিদিনের মাল প্রতিদিন ক্রয় করেন। যে দামে কেনে কিছু লাভ নিয়ে তা আবার একই দিনে বিক্রি করেন। দাম বাড়া বা কমা তাদের হাতে নেই এটি আমদানিকারক ও বাজারের আড়ৎদাররা বলতে পারবে। তবে ক্রয় রশিদ না রাখা তাদের ভুল বলে স্বীকার করেন তারা।
এদিকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দেখেই বাজারের ব্যবসায়ীদের এই অদেখা সিন্ডিকেট বন্ধে ফুঁসে উঠে সাধারণ ক্রেতারাও জানান তার নাভিশ্বাসের কথা। দাবি জানান নাগালের মধ্যে দাম নিয়ে আসার।
ক্রেতাদের মাঝে বগুড়া রহমাননগর এলাকার বাসিন্দা চাকুরিজীবি আব্দুস সালাম জানান, ঈদের আগে দামের এই উর্ধ্বমুখী অবস্থায় নাভিশ্বাস উঠে গেছে তাদের। এক পোয়া আদা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায় কোন দেশে বসবাস করছে তারা এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। সেউজগাড়ি এলাকার দিনমজুর রাবেয়া বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ ২ টাকা কামায় করে ৩ টাকার আদা আর কাঁচামরিচ খেলে জীবন চালাবো কিভাবে? তিনি বলেন, সরকার কঠোর পদক্ষেপ না নিলে দাম বাড়াতে কাজ করা এই সিন্ডিকেটের যাতাকলে মারা যাবে সাধারণ মানুষ।
এদিকে দুপুর থেকে শুরু করে কয়েক ঘন্টার অভিযানে ভ্রাম্যমান আদালতে বাজারের ব্যবসায়ী নেতা, আড়ৎদার ও কমিশন এজেন্টসহ বাজার স্থিতিশীল রাখতে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়। এছাড়াও আড়ৎদার ও কমিশন এজেন্ট আজমেরী ভান্ডারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ বাজারের ৬ জন ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হয় মোট ২১ হাজার টাকা। ঈদের আগে ভ্রাম্যমান আদালতের এই অভিযানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সাধারণ ক্রেতারা। ঈদ আসলেই অজানা কারণে বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। ক্রয় বা বিক্রয়ের রশিদ লুকিয়ে ইচ্ছাস্বাধীনভাবে লাভ করতে চাই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী আর পকেট কাটা পরে ভোক্তাদের। অমানবিক এই সিন্ডিকেটের শেষ হবে কবে প্রশ্ন সাধারণ মানুষের? কারণ অভিযান শেষে ম্যাজিস্ট্রেটের বাজার ত্যাগের আগেই মূল্য যা ছিলো তা দিয়েই কিনতে হয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের।
সার্বিক প্রসঙ্গে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা ইয়াসমিন জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান কঠোরভাবে চলমান থাকবে। তিনি বলেন, অভিযানে আদা ও কাঁচামরিচের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পিছনে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে উভয় ক্ষেত্রেই অসামঞ্জস্য চোখে পরেছে যা মনিটরিং করা হবে। এছাড়াও নতুন করে আদা আমদানি না হওয়া পর্যন্ত বাজারে বেশি দামে আদা বিক্রি না করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয় যা না মানলে পরবর্তীতে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বল্লেন এই কর্মকর্তা,আমাদের গ্রামবাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর.কম(ডেইলী) -এর বগুড়া জেলা প্রতিনিধি ঃ- মোঃ মাসুদ রানা সরকার কে।