টঙ্গী: শ্রমিক আন্দোলনের সাথে শ্রমিক বেশে হঠাৎ মিশে যায় ১৫/২০ জন স্থানীয়ভাবে অপরিচিত লোক। মালিকপক্ষের সাথে সভা শেষে বাইরে বেরিয়ে ফেডারেশনের নেতারা যখন শ্রমিকদের সাথে কথা বলছিলেন ঠিক সেই সময় শ্রমিক বেশে থাকা অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী শ্রমিক নেতা শহিদকে ধাওয়া করে। দৌড়ে ধরে ফেলে কিল ঘুষি মারলে শহিদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকেরা এ সব কথা বলেন। এই ঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা হলে পুলিশ মাজহরুল ইসলাম(৩৫) নামে শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মীকে এক আটক করে।
সরেজমিন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় এই ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে শ্রমিকরা এই তথ্য দেয়।
নিহত শহিদুল ইসলাম শহিদ(৪৫) এর পিতার নাম আজগর আফ্রাদ। বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মিঠালু গ্রামে। তিনি গাজীপুরের বড় বাড়ি এলাকায় থেকে পোষাক শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনে নেতা হিসেবে কাজ করতেন।
অপারেটন আনোয়ার হোসেন বলেন, বেতন দেয়ার কথা ছিল তাই আমরা এসেছি। সারাদিন ঘুরে বেতন পাইনি। সন্ধ্যায় ফেডারেশনের চার নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদ, আ: রহিম, আক্কাছ আলী ও শাহাদাৎ হোসেন মালিক পক্ষের সঙ্গে সভা করে বাইরে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। ঠিক এই সময় শ্রমিকবেশে থাকা ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী চার নেতাকে ধাওয়া করে এলোপাথারী মারধর করে। কিন্তু শহিদকে বেশী মারার কারণে তিনি মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সেম্পল অপারেটর মামুন মিয়া বলেন, কিছু বুঝার আগেই হঠাৎ হামলা হয়। হামলাকারীরা এলাকায় অপিরিচিত। তাদের কেউ চিনেনা। মারধরের সময় সন্ত্রাসীরা বেতন নিয়ে দিতে পারলি কই বলে চিৎকার চেচামেচি করেন।
কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর রাকিবুল হাসান কালের কন্ঠকে বলেন, হামলাকারীরা কেউ শ্রমিক নন। তাদের আমরা চিনি না। তারা স্থানীয়ও না। শ্রমিক বেশে আন্দোলনের সঙ্গে মিশে এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বকেয়া বেতন দিয়ে দিলে হয়ত হামলাকারীরা এমন সুযোগ পেত না।
এর আগে টঙ্গীর সাতাইশে বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলায় আহত শহিদুল ইসলাম শহিদ নামে এক বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেতা শহিদুল ইসলাম শহিদ নিহত হয়েছেন।
রবিবার(২৫) জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় অবস্থিত প্রিন্স জ্যাকার্ড সুয়েটার লি: এর সামনে তিনি সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন। হাসপাতালেনেয়ার পর রাত সাড়ে ৯টায় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
স্থানীয় তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত স্টাফ ব্রাদার আশরাফুল ইসলাম জানান, গত রাত ৯টা ২০মিনিটে জনৈক শরিফুল ইসলাম নামে একজন শহিদুল ইসলামকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখানেই তার মৃত্যু হয়। তারপর তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে লাশ মর্গে রাখা হয়। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাবে দায়িত্বরত সিনিয়র ব্রাদার শাহজাহান মন্ডল জানান, রাত ২টার পর লাশ আনা হয়েছে। এখন মর্গে রাখা আছে। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শাহ আলম জানান, হত্যার ঘটনায় ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী কল্পনা আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় ৬জনকে শনাক্ত করে অজ্ঞাতনামা ৫/৬জনকে আসামী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম(৩৫) নামে ফেডারেশনের এক কর্মীকে আটক করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তার ও হত্যার মোটিভ উদঘাটনের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট কাজ করছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি) মোশারফ হোসেন জানান, এই ঘটনা তদন্ত চলছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিট কাজ করছে। আশা করি ভালো ফলাফল পাব। তবে দুপুরের পর শ্রমিকদের পাওনা বকেয়ার টাকা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
২০ জুন থেকে প্রিন্স জ্যাকার্ড সুয়োটার লি: কারখানার শ্রমিকেরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। আজ ২৫ জুন তাদের বেতন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেতন না দেয়ায় শ্রমিকরা আবার বিক্ষোভ করে। এসময় শহিদুল ইসলাম শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হিসেবে সমস্যা সমাধানের জন্য এলে সন্ত্রাসী আক্রমনের শিকার হন। তাৎক্ষনিকভাবে তাকে নিকটবর্তি তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। ও পরে লাশ রাত আড়াইটার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়।