নতুন আয়কর আইনে ফ্ল্যাট ও জমিতে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু জমি কেনায় এই সুযোগ বাতিল করে শুধু ফ্ল্যাটে কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে আয়কর আইনটি রবিবার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ফলে জমি কেনায় কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকল না।
এ ছাড়া নতুন আয়কর আইনে বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নতুন করারোপ বা করহার বৃদ্ধি করতে পারবে না। পাশাপাশি গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় কালোটাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার করহার বাড়ানো হয়েছে। আর কোনো কোম্পানির টার্নওভার ৩ কোটি টাকার কম হলে, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দ্বারা প্রত্যায়িত আয় বিবরণী রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে না।
অন্যদিকে ৪৩টি সরকারি-বেসরকারি সেবা নিতে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ন্যূনতম কর দেওয়ার বিধানটি অর্থবিল পাসের সময় প্রত্যাহার করা হতে পারে।
পুরাতন আয়কর অধ্যাদেশে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কর রেয়াত সুবিধা ছিল। নতুন আইনের ষষ্ঠ তফসিলে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত অংশে সরকারি সিকিউরিটিজের কথা উল্লেখ থাকলেও সঞ্চয়পত্র বাদ পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনে সিকিউরিটিজের সংজ্ঞায় সংশোধনের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র ও ডিবেঞ্চারকে যুক্ত করা হয়েছে। বিধায় নতুন আইনের অধীনে সঞ্চয়পত্র ও ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যাবে।
গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় কালোটাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় কালোটাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০০ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের ফ্ল্যাট কিনলে প্রতি বর্গমিটারের ৬ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। প্রস্তাবিত বিলে এটি ৫ হাজার টাকা ছিল। এ ছাড়া জেলা সদরের পৌরসভা এলাকার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে কর ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ছোট কোম্পানির রিটার্ন জমার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বিলের ৭৩ ধারায় বলা হয়েছিল, ২ কোটি টাকার বেশি টার্নওভারধারী কোম্পানি, ফার্ম ও ব্যক্তিসংঘের রিটার্নের সঙ্গে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দ্বারা প্রত্যায়িত আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। এ সীমা বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা হয়েছে, বিধায় ছোট কোম্পানিগুলোর কর পরিপালনের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে।
এ ছাড়া পুরাতন আইনে প্রায়শই এনবিআর বছরের যে কোনো সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে করহার পরিবর্তন করতে পারতো। নতুন আইনে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে করারোপ বা করহার বৃদ্ধি করা যাবে না- এই শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।
প্রস্তাবিত বিলে চিকিৎসা ও ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করলে আয়কর রিটার্নে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়, এ বিধানও বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলে, আয়বর্ষের যে কোনো সময় গাড়ি কিনলে, সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে গৃহসম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করলে, বিদেশে সম্পদ থাকলে এবং কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হলে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে। এর বাইরে সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আয়কর বিলে।