লতিফ সিদ্দিকীর দায়িত্ব নেবে না আওয়ামী লীগ

Slider রাজনীতি

latifSm_133396301
ঢাকা: দল থেকে বহিস্কৃত ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব নেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দল থেকে বহিস্কারের পর আওয়ামী লীগের আর কোনো দায়িত্বও নেই বলে মনে করেন দলের নেতারা।

এদিকে জামিনে মুক্তির পর লতিফ সিদ্দিকী জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই যোগ দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য নয়, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে যোগ দেবেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে, দল থেকে বহিস্কারের পর লতিফ সিদ্দিকী এখন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। তিনি সংসদের অধিবেশনে যোগ দেবেন কি দেবেন না সেটা তার বিষয়। তার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মন্তব্য করেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দল থেকে বহিস্কার করলে সংসদ সদস্য পদ যায় না। দল থেকে বহিস্কার করা হলেও তাই স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে সংসদে তার (লতিফ সিদ্দিকী) পদ বহাল রয়েছে।

সে হিসেবে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে এবং অধিবেশনে যোগ দিতে পারবেন। এটা তার বিষয়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ যা যা শস্তি দেওয়ার দিয়েছে। তাকে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে, তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মামলায় আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। কিন্তু সংসদ সদস্য পদ থেকে তো আওয়ামী লীগ কাউকে বহিস্কার করতে পারে না।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা ১৭টি মামলায় কয়েক মাস জেলে থাকার পর হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে গত ২৯ জুন মুক্তি পেয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। তার বিরুদ্ধে একই ধরনের আরও ১০টি মামলা হলেও সেগুলোতে গ্রেফতানি পরোয়ানা জারি করেননি আদালত। তাই গ্রেফতানি পরোয়ানা জারি থাকা মামলণাগুলোতে উচ্চ আদালত জামিন দেওয়ায় তিনি জামিনে মুক্ত হতে পেরেছেন।

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে মন্তব্য করায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর গত বছরের ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ থেকে তাকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী থেকেও পরে তাকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়।

তবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত স্পিকার বা নির্বাচন কমিশিনকে অবহিত করা হয়নি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, কোনো সংসদ সদস্যকে তো আর বহিস্কার করা যায় না। তাকে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। দলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিহ্ন করা হয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগের আর করার কি আছে?

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি কিছু বলতে পারবো না।

বিষয়টি সম্পর্কে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আরও বলেন, সংসদ সদস্য পদ যায় দুই কারণে। একটি হলো দলের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট দিলে। আরেকটি ওই সংসদ সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করলে। লতিফ সিদ্দিকী কোনোটিই করেননি। অতএব তার সদস্য পদ আছে। আর একটি বিষয় হলো দল সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচিত করে সংসদীয় এলাকার জনগণ। ওই এলাকার জনগণের প্রতি তার দায়বদ্ধতা থাকে। লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও তিনি স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে সংসদে ওই এলাকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *