বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সাক্ষ্য গ্রহণ করছেন আদালত।
বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ নিয়ে ঢাকার নিম্ন আদালতে প্রতিদিনই মিছিল সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে তিন দিন আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন তারা। এ কারণে মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণকালে ঢাকার সিনিয়র মহানগর স্পেশাল জজ আদালত কক্ষের সামনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা পাহারায় থাকেন।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতের সামনে মিছিল করেন। এরপর বিকেল ৩টার দিকে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ ১২/১৪ জন সিনিয়র আইনজীবী ঢাকার সিনিয়র মহানগর স্পেশাল জজ আদালতের এজলাস কক্ষে আসেন। ৩টা ৪০ মিনিটে বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এজলাসে ওঠেন।
বিচারক এজলাসে ওঠার পর অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত অনুমতি দিলে একটি কথা বলতে চাই।’ বিচারক অনুমতি দিলে তিনি তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের মামলার নম্বর উল্লেখ করে বলেন, ‘মামলাটিতে প্রতিদিনই সাক্ষ্য গ্রহণ করছেন। আমরা চাইব প্রতিদিন যেন না হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের শিডিউলে যেন পরিবর্তন আনেন।’ তখন বিচারক বলেন, ‘এর আগেও আপনাদের বলেছিলাম, আপনাদের অনুভূতির প্রতি আমি সম্মান দেখাব। কিন্তু আপনারা সে কথা রাখেননি।’ তখন মাসুদ তালুদকার বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল।’ এরপর বিচারক বলেন, ‘আবারও বলছি- সাক্ষ্য গ্রহণের একটি শিডিউল আছে, এটা শেষ হলে আপনাদের অনুভূতির প্রতি আমি সম্মান দেখাব।’ এরপর বিএনপি দলীয় আইনজীবীরা এজলাস থেকে বেরিয়ে যান এবং বিচারক এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেন।
মামলাটিতে অভিযোগপত্রভুক্ত ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ ও ৩১ মে এবং গত ৫ জুন মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ রাখায় বিএনপি দলীয় আইনজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী দলীয় আইনজীবীদের আদালত কক্ষে এবং সামনে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গত ৩১ মে ঘটনায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের নাজির কোতোয়ালি থানায় একটি জিডিও করেছেন। সেখানে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারসহ ২৮ আইনজীবীর নাম উল্লেখ রয়েছে।
গত ১৩ এপ্রিল এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। চলতি বছরের ২৬ জুন হাইকোর্ট তারেক ও জোবায়দাকে ‘পলাতক’ ঘোষণা করে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার দুর্নীতি মামলা দায়ের ও তার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে করা পৃথক রিট আবেদন খারিজ করে দেন।
রিট খারিজ করে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট একইসঙ্গে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা এ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে যত দ্রুত সম্ভব বিচার কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে এ রায় পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে মামলার রেকর্ড ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠাতে বলা হয়।
ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।
২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
চিকিৎসক জোবায়দা বর্তমানে স্বামী তারেকের সঙ্গে ১৩ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দদুক মামলাটি করেছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০০৮ সালে এর কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান মাহবুব আলী খানের মেয়ে জোবায়দা ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলেন। তার দুই বছর আগে তারেকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে জোবায়দাকে বরখাস্ত করে সরকার।