মদপানের পর বিল চাওয়ায় রাজশাহী পর্যটন মোটেল বারে হামলা ও ভাঙচুর করেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বারের কর্মচারীদের মারধর ও তাদের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেন। এক পর্যায়ে বার কর্তৃপক্ষ ফটকে তালা দিয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার ও ক্ষতিপূরণের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পর্যটন মোটেল বারের কর্মচারীরা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার পর রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইশতিয়াক হৃদয়ের সঙ্গে ১২-১৩ জন নেতাকর্মী বারে যান। সেখানে তারা মদপান করেন। এতে তাদের বিল আসে সাত হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু হৃদয় ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বিল পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে বার কর্মচারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এ পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুই কর্মচারীকে মারধরও তাদের দুটি মোবাইল ফোন সেট ভেঙে ফেলেন। বারের গ্লাস ও অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ত্রাস সৃষ্টি করেন।
এদিকে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে কর্মচারীরা বারের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরপর পুলিশে খবর দেওয়া হয়। ঘটনা জানতে পেরে রাজপাড়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাবিল হাসানসহ কয়েকজন নেতা সেখানে আসেন। এরপর ক্ষমা চান এবং ভুল স্বীকার করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা সেখানেই ক্ষতিপূরণ দেন। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা হৃদয়ের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বারে গিয়ে প্রায়ই টাকা না দিয়ে মদপান করেন। বিষয়টি নিয়ে বার কর্মচারীদের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই ঝামেলা হয়। অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য বেশ কয়েকবার ছাত্রলীগ নেতা হৃদয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে রাজপাড়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নাবিল হাসান বলেন, কর্মচারীদের সেরকম মারধর করা হয়নি। সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে দুটি মোবাইল ভেঙে যাওয়ায় সেটির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষয়-ক্ষতির জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপর মুচলেকা দিলে পুলিশ নেতাকর্মীদের ছেড়ে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কী না- সেটি আমার জানা নেই। বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ নেব। সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহী পর্যটন মোটেল বারের সিনিয়র ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অনেকেই মদপানের পর মাতলামি করেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও এমনটিই করেছেন। তবে তারা বেশকিছু ক্ষতি করেছেন। ক্ষতিপূরণ নেওয়া হয়েছে। আগামীতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না-মর্মে পুলিশের কাছে মুচলেকা দেওয়ায় তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ওসির দায়িত্বে থাকা এসআই কাজল নন্দী জানান, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্ষমা চেয়েছেন। এছাড়া ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কারণে এবং মোটেল বার কর্তৃপক্ষ অভিযোগ না দেওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।