দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করে যাবে বলে জানিয়েছেন জামায়াত ইসলামীর নেতারা। আজ শনিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বর্গতি, আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে করা সমাবেশে এ কথা বলেন তারা। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
দশ বছর পর পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাজধানীতে সমাবেশ করল ইসলামী। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল দলটি। অনুমতি না মিললেও গত দশ বছরে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াত। সেসব কর্মসূচি থেকে তাদের নেতাকর্মীও আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে জামায়াত নেতারা।
এই সমাবেশে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের দশ দফা লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন দলের প্রচার বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ। দাবিগুলো হচ্ছে- কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ নেতাকর্মী এবং আলেম-ওলামাকে মুক্তি দিতে হবে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর আবার জেলগেটে আটক অসাংবিধানিক-মানবাধিকার পরিপন্থী কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং দায়িদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা-মহানগরীর সব কার্যালয় খুলে দেওয়া, সংবিধান স্বীকৃত মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমান আহমদ বিন কাসেম, হাফেজ জাকির হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা আল মোকাদ্দাস ও মোহাম্মদ ওলিউল্লাহসহ নিখোঁজ ব্যক্তিদেরকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
জামায়াত আরও দাবি করেছে- দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি রোধ করে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় আনতে হবে। বিদেশে পাচার করা সব অর্থ ফেরত এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা এবং পাচার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্ধ সব চ্যানেল, জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু ও সাংবাদিক দমন বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে জনগণের দাবি মেনে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান নির্বাচন। সেটা হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। সেটা করতে হলে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করতে হবে। কিন্তু এরা দিনের ভোট রাতে করে। লজ্জা তো ঈমানের অঙ্গ। কিছুটা তো লজ্জা থাকা উচিত নেতাদের। সুতরাং বলব, ২০১৪ ও ২০১৮ গেছে যাক। এবার ২০২৪ আর সেভাবে যাবে না। যদি আওয়ামী লীগ বোঝে তাহলে আসুন, আলোচনা করুন। এবারের নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সে দাবি আদায়ে যা করা দরকার আমরা সেই আন্দোলন করব।’
জামায়াত ইসলামীর সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীর একাংশ
আদালত কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের নাম উচ্চারণ করেন জামায়াতের প্রচার বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ। এ সময় গত ১৫ বছরে গ্রেপ্তারসহ নানা নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘এই সরকারের আমলে সবচেয়ে নির্যাতিত জামায়াত। এই সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে ২৪৬ জন হত্যা করা হয়েছে, ৯৬ হাজার গ্রেপ্তার এবং ৯১ হাজার নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে তাদের গায়ে, পায়ে এবং চোখে বন্দুক দিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। এই অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিচার করা হবে বাংলার মাটিতে।’
জামায়াতের সমাবেশ উপলক্ষে দুপুর থেকে মৎস্য ভবন, শাহবাগ সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল। এপিসি (রায়ট কার), প্রিজন ভ্যানসহ সাদা পোশাকে সদস্যরাও ছিল সতর্কাবস্থায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘জামায়াত ইসলামী তাদের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করেছে। যথা সময়ে তারা সমাবেশ করে চলে গেছে। কোনো আটক বা গ্রেপ্তার নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াত নেতা এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোবারক হোসাইন, আব্দুর রহমান মুসা, ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ, ড. হেলাল উদ্দিন, আ. জব্বার, গোলাম মোস্তফা, মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আবদুল মান্নান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।