ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকা। অথচ সে পেঁয়াজ খুচরা বাজারে মিলছে না। এখনো খুচরা বাজারে এ নিত্যপণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা।
আড়তদারদের দাবি, দাম কমিয়ে দেওয়ার পরও খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনতে আসছেন না। ফলে বেশির ভাগ আড়তে এখনো দেশি পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ট্রাকে ট্রাকে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের কেনা পেঁয়াজ এখনো তারা বিক্রি করে শেষ করতে পারেননি। তাই নতুন করে পণ্যটি সংগ্রহ করছেন না তারা।
গতকাল বুধবার খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তে ঘুরে দেখা যায়, দুপুরেও পেঁয়াজবাহী ট্রাক খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করেছে। শ্রমিকরা ব্যস্ত ট্রাক থেকে পেঁয়াজের বস্তা আড়তে নিয়ে যেতে। তবে আড়তগুলোতে এখনো দেশি পেঁয়াজে ভরপুর। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অথচ তিন দিন আগেও দেশি ছোট জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৯০-৯৫ টাকায়। এখন অর্ধেক দাম কমিয়েও ক্রেতা সংকটে কপাল পুড়ছে কিছু কিছু আড়তদারের। যারা দাম আরও বাড়বে এ আশায় অতিরিক্ত মজুদ করে রেখেছিল।
মেসার্স হেলাল অ্যান্ড সন্সের কর্ণধার চৌধুরী মোহাম্মদ বশরউদ্দিন বলেন, আমাদের আড়তে মঙ্গলবার রাতেই প্রায় ৫৩ টন ভারতীয় পেঁয়াজ এসেছে। কিন্তু আগের দেশি পেঁয়াজ এখনো বিক্রি করে শেষ করতে পারিনি। যারা অগ্রিম পেঁয়াজ নেওয়ার কথা বলেছিলেন, সেসব খুচরা বিক্রেতারাও বাজারমুখী হচ্ছেন না।
মায়ের দোয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রনি বিশ্বাস আমাদের সময়কে বলেন, দাম বাড়ানো-কমানো সবটাই করেন আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্ট ব্যবসায়ীরা। আমরা যারা সাধারণ আড়তদার তারা যে দামে কিনি খরচ যোগ করে কেজিতে ৫ টাকা লাভে ব্যবসা করি। আমরাই সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হই। ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করার সাথে সাথে দেশি পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এরপরও ক্রেতা পাচ্ছি না। অর্ধেকেরও বেশি লোকসান দিতে হবে আমাদের।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখন প্রতিদিন পেঁয়াজবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে কম হলেও ২০টি। প্রতিটি ট্রাকে ১৪ টন হিসাবে আড়তে পেঁয়াজ প্রবেশ করছে প্রায় ২৮০ টন। এসব পেঁয়াজ আড়তেই মজুদ হচ্ছে। এখনো খুচরা বাজারে আসেনি। খুচরা ক্রেতারা দাম আরও কমার অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
নগরীর চকবাজারের খুচরা বিক্রেতা হাজী ইসমাইল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, আগের সংগ্রহ করা পেঁয়াজ এখনো রয়েছে দোকানে; বিক্রি হয়নি। তাই এখন আর নতুন করে পণ্যটি সংগ্রহ করছি না। আগের কেনা দাম ছিল ৮০ টাকা। এখনো মানভেদে কেজিপ্রতি ৮০-৯০ টাকা দামেই পণ্যটি বিক্রি করছি।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, আমদানির অনুমতির ঘোষণা আসার পর দাম প্রতিদিনই কমছে। গত তিন দিনে পণ্যটির দাম কমেছে কেজিতে ৪৫ টাকা। দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। এখনো সেভাবে ক্রেতা পাচ্ছি না।
চাক্তাই আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, মঙ্গলবার ভারত থেকে আমদানি করা ৮৪ টন পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে প্রবেশ করেছে। বুধবার আরও ২৯০ টন পেঁয়াজ এসেছে আড়তগুলোতে। আড়তগুলো পেঁয়াজ থাকলেও ক্রেতার সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, এখন খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজ তেমন বিক্রি নেই। চট্টগ্রামে এমনিতেই দেশি পেঁয়াজের চাহিদা কম। কেননা সেগুলো ছোট আকারের। এখানে বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। ভারতের পেঁয়াজ আসার পর দেশি পেঁয়াজের দাম আরও কমে গেছে।
জানা যায়, দেশি কৃষকদের সুরক্ষা দিতে গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে সরকার। এর এক মাস পর থেকে পণ্যটির দাম বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে পাইকারিতে ৯৫ টাকায় উঠে পেঁয়াজের দাম। এরপর গত রবিবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অনুমতি দেয় সরকার।