গ্রাম বাংলা ডেস্ক: হল্যান্ডকে হারিয়ে দুই যুগ পর ফাইনালে আর্জেন্টিনা। আবেগ ছুঁয়ে গেল মেসিকে।
কিছুক্ষণ আগে স্বপ্ন পিষ্ট হয়েছে ‘জার্মান মেশিনে’। হতবিহ্বল, বিষণ্ন লিওনেল মেসির চোখে জল। দাঁড়িয়ে রইলেন মাঠের এক পাশে। কোচ ডিয়েগো ম্যারাডোনা এসে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। মুছে দিলেন অশ্রুধারা। কিন্তু মনে থেকে যাওয়া কালো দাগটা কি মুছল তাতে?
টাইব্রেকারে ম্যাক্সি রদ্রিগেজের বুলেট শট ইয়াসপার সিলেসেনকে পরাভূত করে ঠাঁই পেল হল্যান্ডের জালে। ২৪ বছর পর স্বপ্নের ফাইনালে আর্জেন্টিনা। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেসি ছুটলেন উদযাপনে। চোখে তখন জল টলমল। চার বছরের পার্থক্যে দুই অশ্রুর অর্থ ভিন্ন—একটি বেদনার, অপরটি আনন্দের।
তিনি অন্তর্মুখী, কথা বলেন কম। আবেগ প্রকাশেও যথেষ্ট সংযমী। কিন্তু এবার মেসি যেন সবকিছুতেই ভিন্ন। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামকে হারানোর পর দেখা গিয়েছিল তাঁর আবেগের বহিঃপ্রকাশ। কাল টাইব্রেকারে হল্যান্ডকে হারিয়ে মেসি মাতলেন বুনো উদযাপনে! দুই যুগ সেমিফাইনালে ওঠেনি আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ওঠার তো প্রশ্নই আসে না। সেই আর্জেন্টিনার এবার ভিন্ন চেহারা। মেসির নেতৃত্বে ছয় ম্যাচ অপরাজিত থেকেই ফাইনালে উঠে গেল নীল-সাদারা। এ সাফল্যে মেসির চোখে জল গড়িয়ে পড়বে, সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?
ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য সব সম্মানই ছুঁয়ে দেখা হয়েছে ২৭ বছরের এ জীবনে। ছোঁয়া হয়নি কেবল বিশ্বকাপের শিরোপা। জাতীয় দলের জার্সিতে জ্বলে উঠতে পারেন না—এ অভিযোগ শুনতে শুনতে তাঁর কান ঝালাপালা হওয়ার জো! মেসি নিজেও বলেছেন, বিশ্বকাপ না জিতলে সত্যিকারের কিংবদন্তি হওয়া যায় না। কিন্তু বিশ্বকাপ শিরোপা জেতা যে এভারেস্ট বিজয়তুল্য! পথে পথে তার বিরাট বাধা। কষ্টসাধ্য হলে এভারেস্ট চূড়ায় ওঠা অসম্ভব তো নয়!
সে অসম্ভবকে সম্ভব করতে মেসিরা পাড়ি দিয়েছের দীর্ঘ পথ। ব্রাজিল বিশ্বকাপে ছয়টি বাধা এরই মধ্যে অতিক্রম হয়েছে। চূড়ায় বিজয়ের পতাকা গেড়ে দিতে আর মাত্র একটি বাধা—জার্মানি। সেটিও সহজ কোনো প্রতিপক্ষ নয়। এ দলটির বিপক্ষে আর্জেন্টিনার অনেক অম্ল-মধুর স্মৃতি। ম্যারাডোনা নামের মহানায়ক এ জার্মানিকেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে আনন্দে ভাসিয়েছিলেন। আবার ওই জার্মানির কাছেই ১৯৯০ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে কেঁদেছিল আর্জেন্টিনা। নীল-সাদারা কেঁদেছিল আরও দুইবার—২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায় নিয়ে। এবার মেসি কি পারবেন সব যাতনা উপশম করতে? পারবেন আবারও বিজয়ের আনন্দে কাঁদতে?