চট্টগ্রাম: ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতকে নির্বিঘ্ন করতে সড়ক-মহাসড়কে যাত্রী হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্সে থাকবে পুলিশ। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক সাতদিনের মধ্যে মেরামতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বুধবার (১ জুলাই) পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার একে এম হাফিজ আক্তার।
এসময় জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিএমপি, সওজের কর্মকর্তা এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে পুলিশ সুপার বলেন, সড়ক-মহাসড়কে, বাসস্ট্যান্ডে অহেতুক চাঁদাবাজি ও যাত্রীদের হয়রানি করা হয়। ঈদ এলে এ হয়রানি আরও বাড়ে।
‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এ বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে থাকব। কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবেনা।’ বলেন পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, আমরা কন্ট্রোল রুম খুলেছি। কেউ কোন ধরনের হয়রানির শিকার হলে কন্ট্রোল রুমে ফোন করবেন। পুলিশ হোক, সরকারি কর্মকর্তা হোক আর সন্ত্রাসী হোক আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
বৈঠকে পুলিশ ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ঈদের তিনদিন আগে-পরে মহাসড়কে জরুরি পণ্য ছাড়া সব ধরনের ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ঈদের সময় মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ে। যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে ঘরমুখী মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।
‘মানুষের কষ্ট লাঘবে ঈদের দিন, ঈদের আগের ও পরের দিন অর্থাৎ মোট তিনদিন মহাসড়কে জরুরী পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া সব ধরনের ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে।’
বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কয়েকজন নেতা সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির কাগজপত্র তল্লাশির নামে পুলিশের হয়রানির অভিযোগ করেন।
পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিকভাবে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত কাগজপত্র তল্লাশি বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে যানজট হলে এবং গুরুতর আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মামলা দেয়ার ঘোষণা দেন।
এছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টোদিকে গাড়ি না চালানোরও অনুরোধ করেন পুলিশ সুপার।
যানজট নিরসন ও যানবাহনে চলাচলে শৃঙ্খলা রাখতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তায় মহাসড়কে, বাসস্ট্যান্ডে ও বাজারে পাঁচশ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার। এছাড়া আলাদা পিকেট ও মোবাইল টিম এবং অতিরিক্ত ট্রাফিক সদস্য থাকবে বলেও তিনি জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ কভার্ডভ্যান ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবু মোজাফফর বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা বৃষ্টিতে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালনো যাচ্ছেনা। গাড়িও গর্তে পড়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে।
মহাসড়কে খানাখন্দ মেরামত না করলে ঈদের সময় যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এসময় পুলিশ সুপার সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউদ্দিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। তিনি জানান, চারলেন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। সর্বোচ্চ সাতদিনের মধ্যে মেরামত শেষ হবে।
মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধে এসি-নন এসি সব বাস ছাড়ার আগে স্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিডিও করে তা সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
তিনি বলেন, ‘তিন-চারদিনের মধ্যেই মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে শুরু করবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবানসহ বিভিন্ন মহাসড়ক এবং অভ্যন্তরীণ মূল সড়কগুলোতে যাতে নির্বিঘ্নে গাড়ি চলাচল করতে পারে, মানুষ যাতে সহ বাড়ি পৌঁছে যেতে পারেন আমরা সেই ব্যবস্থা করতে চাই। ইনশল্লাহ আমরা মানুষকে স্বস্তির মধ্য দিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে পারব।’