ঢাকা: সরকার রাজধানীর যানজট নিরসনে ভেহিকুলার আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিলেও তা দীর্ঘসূত্রিতার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেটর অথরিটির (ডিটিসিএ) চিঠি চালাচালির মধ্যেই আটকে আছে এ প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনের লক্ষে ৮টি আন্ডারপাস ও দু’টি ইউটার্ন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং শাহজাহানপুর থেকে বিমানবন্দর রোডকে সিগন্যালমুক্ত করা যাবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
ডিএসসিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিয়ে ৬শ’ ৪০ কোটি টাকা। প্রতিটি আন্ডারপাস নির্মাণে ব্যয় হবে ৬৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত প্রকল্পের অধীনে রাজধানীর ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, ৭ নম্বর, ২ নম্বর, রাসেল স্কয়ার, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নীলক্ষেত, ফকিরাপুল ও রাজারবাগ-শাহজাহানপুরের ইন্টারসেকশনে ভেহিকুলার আন্ডারপাস এবং মিরপুর রোডের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরের মানিক মিয়া এভিনিউ ইন্টারসেকশনে ইউটার্ন নির্মাণ করা হবে।
এগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়নের পর দ্বিতীয় দফায় পল্টন, এফডিসির পাশের রেলক্রসিং, বনানীর স্টাফ রোড রেলক্রসিং, মালিবাগ রেলক্রসিং, আগারগাঁও, গুলশান-২ গোল চত্বর, গ্রিন রোড-পান্থপথ ক্রসিং, তেজগাঁওয়ের নাবিস্কো মোড় এবং কাঁটাবন-এলিফ্যান্ট রোড ক্রসিং এ ১১টি আন্ডারপাস নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ডিএসসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার পরই সেটি ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেটর অথরিটির (ডিটিসিএ) কাছে পাঠানো হয়েছে। ডিটিসিএ’র সম্মতি চেয়ে একটি চিঠি পাঠানো হলেও এখনো তাদের কোনো উত্তর পাইনি আমরা। তাই চলতি বছরের ১৭ জুন ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে আরও একটি রিমাইন্ডার চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি ডিটিসিএ’র সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিএসসিসি’র ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ জানিয়েছে, সড়কের সংযোগগুলোতে মাটির নিচ দিয়ে এসব আন্ডারপাস ও ইউটার্ন থাকবে। ট্রাফিক সিগন্যাল ছাড়াই মাটির নিচে দিয়ে যানবাহন অতিক্রম করতে পারবে এবং এতে যানজট সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ আন্ডারপাসের যানবাহনকে দীর্ঘ সময় সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।
রাজধানীর যানজট নিরসনে ফ্লাইওভারের চেয়ে অধিক কাযর্কর ভূমিকা পালন করবে এসব আন্ডারপাস। ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় অনেক বেশি কিন্তু আন্ডারপাস নির্মাণ ব্যয়ও অনেক কম। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে জায়গার কোনো অপচয় হবে না এবং ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন করপোরেশন কর্মকর্তারা।
ডিএসসিসি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজেক খাদেম জানান, যেসব পয়েন্ট দিয়ে মেট্রোরেল বা ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, সেসব পয়েন্টে ভেহিকুলার আন্ডারপাস তৈরি করা হবে না। কাজেই মেট্রোরেল বা ফ্লাইওভার নির্মাণের ক্ষেত্রেও ভেহিকুলার আন্ডারপাস বাধা হবে না।
ডিইউটিপি’র সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনে ভেহিকুলার আন্ডারপাস কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এতে সড়কে কোনো যানবাহনকে খুব বেশি সময় সিগন্যালে দাঁড়াতে হবে না। রাজধানীবাসী স্বল্প সময়ে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছুতে পারবে।
অবশ্য নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসি’র এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তাবায়িত হতে অনেক সময় লাগবে। প্রতিটি সড়কের মাটির নিচে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ লাইন আছে। আন্ডারপাস নির্মাণের ক্ষেত্রে এ সংযোগ লাইনগুলো সরাতে হবে। কিন্তু এ সংযোগ লাইন সরানোর কাজ ডিসিসি’র নয়। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজ নিজ লাইন সরাতে হবে। সড়কের মাটির নিচে থাকা এসব সংযোগ লাইন স্থানান্তরের ব্যয় যদি আন্ডারপাস নির্মাণের ব্যয় থেকে বেশি হয়, তবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন দীর্ঘসময় লেগে যেতে পারে।