চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝরে পড়া আম দেড় থেকে দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আজ সোমবার সকালে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এই দামে আম কেনাবেচা হচ্ছে।
গতকাল রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচাল উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে পরিপক্ব আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে, ৩টি উপজেলার ছয়শ ৩৪ হেক্টর জমির ৯ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আম পড়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা হচ্ছে ১০ হাজার ৭৫ জন
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম দেড় থেকে ২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর জেলার ভোলাহাট উপজেলার বজরাটেক, গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মকরমপুর ব্রিজ, কাঞ্চনতলা, বোয়ালিয়া বাজার, ঘাটনগর ও মিনিবাজার মোড়ে গ্রাম থেকে কিনে বস্তাভর্তি করে ট্রাকযোগে ঢাকায় পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, ‘ঝড়ে পড়া আম তেমন কোনো কাজে লাগে না। তারপরও বস্তা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে আম ক্রয় করছি। এখন পর্যন্ত ৪০০ বস্তা আম কিনেছি। ভোলাহাটে প্রচুর পরিমাণে ঝড়ে আম পড়েছে। বস্তার অভাবে এখন আম কিনতে পারছি না।’
আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী সদর আলী বলেন, ঝড়ে পড়া আমে দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশিরভাগ আম পরিপক্ব থাকলে তা স্থানীয় জুস ফ্যাক্টরিতে চলে যায়। তবে এখন যেহেতু আমগুলো অপরিপক্ব হয়ে আছে। তাই জুসের পাল্প করা যাবে না। তাই কম দামে কিনে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে অনেকেই এই আম আচার ও রান্না করে খাওয়ার কাজে কিনে নেয়।
বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আমচাষি ফজলুল হক জানান, গতকালের ঝড়ে গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর, বাঙ্গাবাড়ি ও বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকায় অনেক আম পড়ে গেছে। কিছু কিছু গাছে দুই একটা ছিটেফোঁটা আম আছে। অনেক আমচাষি চিন্তায় বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেন না।
গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কাঞ্চনতলা এলাকার আমচাষি রুহুল আমিন বলেন, ‘সামনে সপ্তাহে এসব আম বাজারজাত করা হতো। ঠিক সেই মুহূর্তে এতো পরিপক্ব আম ঝড়ে পড়ায় চাষিরা অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছে। গতকালের ঝড়ে আমাদের কেনা বাগানে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মত আম পড়ে গেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. মাসুদ আহম্মেদ জানান, গতকাল রাত ৯টার পরে জেলার ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ি, দলদলি ও ভোরাহাট, গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্ড়াবাড়ি, চৌডালা, আলীনগর, রাধানগর, পাবর্তীপুর, বোয়ালিয়া, গোমস্তাপুর ও রহনপুর পৌরষা এবং নাচোল উপজেলার ফতেপুর, নাচোল, কসবা ও নেজামপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে পরিপক্ব আমের।
তিনি আরও জানান, গতকাল রাতে জেলাজুড়ে ঝড়-বৃষ্টিতে আমের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এতে চাষিরা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে সার্বিক উৎপাদনে অর্থাৎ কৃষি বিভাগের যে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন, তাতে কোনো প্রভাব পড়বে না।