ঝালকাঠিতে স্ত্রী হত্যার পর থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আলী ইমাম খান অনু। এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঝালকাঠি ইকো পার্কে ছুরিকাঘাতে স্ত্রী সায়মা পারভীনকে তানহাকে হত্যা করেন অনু।
সায়মা ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শহরের টিনপট্টি সড়কের শাহাদাত তালুকদারের মেয়ে।
দুই বছর আগে প্রতিবেশী সায়মাকে বিয়ের করেন ঝালকাঠি শহরের ফকিরবাড়ি এলাকার দলিল লেখক দিদার হোসেন নান্নার ছেলে আলী ইমাম খান অনু। সম্প্রতি সায়মা এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন অনু। গতকাল রোববার রাতে ‘স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত’লিখে অনু ফেসবুকে কয়েকটি স্ট্যাটাস দেন। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে স্ত্রীকে ফোনে স্থানীয় ইকোপার্কে ডেকে আনেন তিনি। এরপর বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে ছুরি দিয়ে সায়মার পেটে ও বুকে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরে অনু ফেসবুকে হত্যার দায় স্বীকার করে কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মহিতুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর অনু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অনুকে আটক করা হয়েছে।
সুদীর্ঘ সাড়ে চার বছরের ভালোবাসা ছিল আমাদের…। আলহামদুলিল্লাহ, মুসলিম শরিয়াহ অনুযায়ী আমরা দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সারা জীবন একসঙ্গে থাকব…। কিন্তু বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। অতঃপর বউ ধীরে ধীরে আমার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে কেমন জানি এড়িয়ে যেতে থাকে।
আমার বউ তার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে সারা রাত চ্যাটিং করত। তার নাম আসিফ ইকবাল। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে জানেন তো? চোরের ১০ দিন আর গেরস্তের এক দিন! আমাদের বেলায়ও ঠিক ঘটেছে, তাই আমার বউ আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি…।
গত শনিবার সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় আসতে দেখি। তখন তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিই। তারপর সে অনেক অনুনয় বিনয় করে আমার কাছে ফোন ফেরত চায়। পরে বউয়ের ফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে পরকীয়া প্রেমিকের অশালীন ম্যাসেজ দেখে আমি নির্বাক হয়ে যায়। আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি।
বউ সব সময় আমার সামনে হুজুর সেজে থাকত, এমন আচরণ করত মনে হয় যেন সে ভাজা মাছটাও উলটে খেতে পারে না…। কিন্তু আজ হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমার বউয়ের আসল চরিত্র…।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তুমি ওড়না ছাড়া তোমার মামাতো ভাইকে ছবি দিয়েছ কেন?
জবাবে সে বলে, খোদার কছম আমি এমনিই দিয়েছি! তারপর আমি যখন তাদের ফ্রিলি কথাবার্তা বলার টপিক সম্পর্কে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে থাকি, তখন সে কোনো উত্তর দিতে পারে না। তখন বলে, আমার সঙ্গে নাকি তার সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে! এরপর হঠাৎ করে দেখি সে তার আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলেছে! তারপর আমি আবার রিকভার দিয়ে আইডিতে ঢুকে দেখি গুরুত্বপূর্ণ অনেক চ্যাটিং ডিলিট করে ফেলেছে। আমি যেন তার কিছুই না দেখতে পারি সেজন্য সে অন্য সবার ম্যাসেজ ডিলিট করলেও প্রাণ ভ্রমরার ম্যাসেজ ডিলিট করতে পারেনি। তার আগেই আমি আইডি রিকভার করতে সক্ষম হয়েছি এবং স্ক্রিনশট রাখতে সক্ষম হয়েছি।
কিছুক্ষণ পর সে তার মায়ের নম্বর থেকে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, নারী নির্যাতন আইনে মামলা দিয়ে সে নাকি আমার জীবন ধ্বংস করে দিবে…। তারপর অনেক ভেবেচিন্তে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বিশ্বাসঘাতক বেঈমানের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এ জন্য নিজের হাতে বউটাকে পরম করুণাময়ের কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দিলাম…। পরপারে ভালো থেক বউ, পরকীয়ার মজা এইবার অন্তত বুঝলা…!