বাংলাদেশের ২৭৫ রানের জবাবে ৩ উইকেট হারিয়েই ২২৫ রান তুলে ফেলেছিল আয়ারল্যান্ড। ৫০ বলে দরকার ছিল মাত্র ৫০ রান। আয়ারল্যান্ডের জয় যখন সময়ের অপেক্ষা মনে হচ্ছিল তখনই আঘাত হানেন অনিয়মিত বোলার নাজমুল হোসেন শান্ত। এই রানে হ্যারি টেক্টরকে ফিরিয়ে শান্ত যে উৎসব শুরু করেন, বাকি ৫ উইকেট নিজেদের মধ্যে ভাগ করে ও আটসাঁট বোলিংয়ে সেই উৎসবের পূর্ণতা দেন দুই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ।
পুরো ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬৯ রানের বেশি করতে পারেনি আইরিশরা। হার দেখে ৫ রানের। প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে রেকর্ড জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিল তামিম ইকবালের দল।
বাংলাদেশের দেয়া ২৭৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৭ রানে স্টিফেন ডোহানির উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। তবে দ্বিতীয় উইকেটে ১২৩ রানের জুটি গড়ে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান ওপেনার পল স্টার্লিং ও তিনে নামা অ্যান্ডি বলবার্নি। ১২৬ রানের মাথায় ফেরেন ৫৩ রান করা বলবার্নি। দলের সাথে আর ২০ রান যোগ হতে ফেরেন স্টার্লিংও (৬০)।
এরপর ৬৪ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়ে দলকে সহজ জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি টেক্টর ও লোরকান টাকার। তবে ম্যাচের নাটকীয়তা তখন অনেক বাকী। যেই নাটকের শুরু করেন শান্ত, টেক্টরকে ফিরিয়ে। ২২৫ রানে টেক্টরের (৪৫) বিদায়ের পর ২২৬ রানে ক্যাম্ফার, ২৩৬ রানে জর্জ ডকরেল ও ২৪২ রানে লোরকান টাকারকে (৫০) বিদায় করেন মোস্তাফিজ।
শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য ২৪ রান দরকার ছিল আইরিশদের, হাতে ৩ উইকেট। মৃত্যঞ্জয়ের করা ৪৯তম ওভারে চার-ছক্কায় ১৪ রান তুলে নেন মার্ক অ্যাডায়ার। হাসান মাহমুদের করা শেষ ওভারে ১০ রান দরকার ছিল। তবে শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিয়ে আইরিশ স্বপ্নের মৃত্যু ঘটান হাসান।
এর আগে, প্রথম ইনিংসে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ২৭৪ রান করে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৮ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৪ রান করে বিদায় নেন রনি। তবে রনি ফিরলেও রানের গতি দারুণভাবে বজায় রেখেছিলেন ব্যাট করছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত। ৬৭ রানের মাথায় ফেরেন শান্তও। দৃষ্টিনন্দন সব বাউন্ডারিতে ৩২ বলে ৩৫ করেন তিনি। দলীয় ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে ক্রেইগ ইয়ংয়ের বলে স্লিপে শান্তর ক্যাচ ধরেন অধিনায়ক অ্যান্ডি বলবর্নি। এরপর চারে নামা লিটন দাসকে নিয়ে জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে দলীয় ১৩৭ রানে লিটনের বিদায়ে ভাঙে ৭০ রানের জুটি।
৩৯ বলে তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করে ফেরেন লিটন। লিটনের বিদায়ে মাঠে নামেন আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া তাওহীদ হৃদয়। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। দলীয় ১৫৯ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন তিনি। পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে পতন হয় তামিমের। ১৮৬ রানের মাথায় জর্জ ডকরেলের করা ৩৪তম ওভারের তৃতীয় বলে লিডিং এজ হয়ে ক্যাচ উঠিয়ে দেন তামিম। সহজ ক্যাচ লুফে নিতে কোনো ভুল করেননি ক্রেগ ইয়ং। যাওয়ার আগে ৮২ বলে ৬টি চারে ৬৯ রান করেন তামিম। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার ৫৬তম ওয়ানডে ফিফটি। ৯ ম্যাচ পর ফিফটি পেয়েছেন তিনি। তবে এই ম্যাচেও শুরুতে তাকে ফেরানোর সুযোগ ছিল। জশ লিটলের বলে দ্বিতীয় স্লিপে তার সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি অ্যান্ড্রু বলবার্নি।
তামিমের বিদায়ের পর মিরাজকে নিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন মুশফিক। ৭৫ রানের জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনশ রানের দিকে। তবে ছন্দপতন শুরু হয় ২৬১ রানের মাথায় মুশফিক অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়লে। ৫ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস করেন মুশফিক। চার রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৩৭ রান করা মিরাজও বিদায় নেন। এরপর ২৭১ রানের মাথায় হাসান, ২৭৩ রানে মোস্তাফিজ ও ২৭৪ রানে ফেরেন মৃত্যুঞ্জয়। শেষ ৪ উইকেটের তিনটিই দখল করেন মার্ক অ্যাডায়ার। ম্যাচে তার শিকার ৪ উইকেট। দুইটি করে উইকেট নেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও জর্জ ডকরেল।