ঢাকা: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী জামিনে ছাড়া পাওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলোর নেতারা।
সোমবার (২৯ জুন) বিকেল ৫টায় লতিফ সিদ্দিকী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হওয়ার পরপরই নেতারা এ প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।
লতিফ সিদ্দিকীর জেল থেকে বের হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, এ বিষয়ে ধিক্কার জানানোর কোনো ভাষা আমার জানা নেই। তবে এটা স্পষ্ট যে, যা হয়েছে তা সরকারের ইঙ্গিতেই হয়েছে। আমি মনি করি এটা সরকারের জন্য কল্যাণকর হবে না।
ধর্মভিত্তিক ২৫টি রাজনৈতিক সংগঠনকে নিয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী দলসমুহের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম লতিফ সিদ্দিকীর জামিনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আত্মস্বীকৃত নাস্তিক আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর মুক্তি নবী প্রেমিক মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
লতিফ সিদ্দিকীর জামিনে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর)। জামিনে বের হওয়ার পরপরই তিনি বাংলানিউজের কাছে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার ১৭ মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার পর সোমবার (২৯ জুন) বিকেল ৫টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন লতিফ সিদ্দিকী। গত ২৩ জুন ১০ মামলায় ও গত ২৬ মে ৭ মামলায় লতিফ সিদ্দিকীকে জামিন দেন বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি ফরিদ আহমদ শিবলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে কটূক্তি করেন তখনকার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশ ও দেশের বাইরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনগুলো সাবেক এই মন্ত্রীর বিচার দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ২৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ১৭ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
পরে সরকার মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বহিষ্কার করেন। আওয়ামী লীগও তাকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করে।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। ২৫ নভেম্বর ধানমণ্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিচারক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
পরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ ধারা মোতাবেক ১৭ মামলায় জামিন ও মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন লতিফ সিদ্দিকী। বাকি ১০ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকায় জামিন চাননি তিনি।
আবেদনে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী দেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ নিজ দেশে বিচার করতে হলে মামলা দায়েরের আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এসব মামলার ক্ষেত্রে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি।