বেসরকারি তিন মোবাইল ফোন অপারেটরের সিম নিবন্ধনের তথ্যে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৪৭ হাজার ২৬৩টি ভুল পাওয়া গেছে। অপারেটরদের নিজস্ব সার্ভারের তথ্যের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কেন্দ্রীয় বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্মের (সিবিভিএপি) তথ্যে এমন বিস্তর ফারাক দেখা গেছে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ মাসে নিবন্ধিত সিমে এই গরমিল পাওয়া যায়। এদিকে মোবাইল ফোন অপারেটিংয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটকের পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় তথ্যই দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সম্প্রতি বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, টেলিটককে তথ্য না দেওয়ার কারণে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বৈঠকে অন্য তিন অপারেটরকে সিমের ভুল তথ্য সংশোধনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মোবাইল অপারেটরগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি কয়েকটি শর্তে এসব গরমিল সংশোধনের সুযোগ দিয়েছে। এগুলো হলোÑ সিমের তথ্যের গরমিল নিয়ে বিটিআরসি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেসব তদন্ত করছে তা চলমান থাকবে। সংশোধিত তথ্যের পাশাপাশি পুরনো তথ্য (ভুল তথ্য) সংরক্ষণ করতে হবে। তথ্য সংশোধনের পর কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে তা অপারেটররা
পুরনো তথ্য বিশ্লেষণ করে সমাধান করবে। এ সংক্রান্ত আইনি জটিলতার দায়ভার অপারেটরদেরই বহন করতে হবে। সংশোধিত তথ্যের প্রতিবেদন বিটিআরসিতে জমা দিতে হবে। অপারেটররা সিম নিবন্ধনের সময় যথাযথাভাবে তথ্য সংগ্রহ না করায় এসব গরমিল দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন এ খাতসংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে অপারেটরদের ভাষ্য, আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গার প্রিন্ট) নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। এভাবে কোটি কোটি গ্রাহকের তথ্য তাৎক্ষণিক সংগ্রহ করার কারণে জাতীয় তথ্য ভা-ারে রক্ষিত গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যের সঙ্গে প্রদত্ত তথ্যের গরমিল দেখা দেয়।
কারও নাম ভুল হয়, কারও ঠিকানা বদলে যায়। শুধু আঙুলের ছাপ নিয়ে সিম নিবন্ধনের অনুমোদন দেওয়া হলে এসব ত্রুটি অনেকটাই কমে আসবে। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি, প্রতিটি ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট জাতীয় তথ্যভা-ারে রক্ষিত আছে। আঙুলের ছাপ মিললে বাকি সব তথ্যই জাতীয় তথ্যভা-ার থেকে পাওয়া যাবে। এতে নিবন্ধন সহজ হওয়ায় গ্রাহক হয়রানি কমবে, তথ্যের গরমিলও অনেকটা হ্রাস পাবে।
জানা গেছে, এর আগেও অপারেটরগুলোর সিম নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্যে এমন ভুল পাওয়া গেছে। ২০২০ সালে জুন পর্যন্ত তিন অপারেটরের সিম নিবন্ধনে ৪ কোটি ৭ লাখ ২৫ হাজার ৪১৮ ভুল চিহ্নিত হয়। পরবর্তীকালে বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে এসব তথ্য সংশোধন করে তিন অপারেটর। গ্রামীণফোনের নিবন্ধনে ভুল পাওয়া যায় ২ কোটি ২৫ লাখ ১৯ হাজার ২১৩; সংশোধন করা হয় ১ কোটি ৯৪ লাখ ২৭ হাজার ৫৭৩ এবং ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৬৪০ তথ্য সংশোধন সম্ভব হয়নি। বাংলালিংকের ভুল পাওয়া যায় ১ কোটি ১২ লাখ ২২ হাজার ৬৯৬; সংশোধন হয় ৮৩ লাখ ১৭ হাজার ৫১২ এবং সংশোধন হয়নি ২৯ লাখ ৫ হাজার ১৮৪টি। রবির (০১৮ প্রি-ফিক্সের) ৬৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫০৯টি ভুলের মধ্যে সংশোধন করা হয়েছে ৫১ লাখ ১৮ হাজার ৭৬৪টি। অপারেটরটির (এয়ারটেল) ০১৬ প্রি-ফিক্সের অর্থাৎ এয়ারটেলের ২৪ লাখ ৫৭ হাজার ২৫১টি ভুল তথ্যের মধ্যে সংশোধন করা হয়েছে ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৭০৫টি।
আর ২০২০ সালে জুলাই থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ মাসে তিন অপারেটরের নিবন্ধিত সিমে সবচেয়ে বেশি গরমিল পাওয়া গেছে বাংলালিংকে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬০টি। এরপর রবিÑ ২ কোটি ৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৮২টি। দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণের গরমিলের পরিমাণ ৪৮ লাখ ১৬ হাজার ৭২১টি। মোবাইলের আন্তর্জাতিক পরিচয় নম্বর (আইএমএসআই) সংক্রান্ত ভুলের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ২ কোটি ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৩২টি। এরপরই রয়েছে নিবন্ধনের তারিখ সংক্রান্ত তথ্যের ভুল, ১ কেটি ৭৯ লাখ ২৯ হাজার ২৮২টি।
আইএস ভেরিফাইড মিসম্যাচের পরিমাণ ১ কোটি ৪ লাখ ৬ হাজার ৩৫৯টি। এ ছাড়া ডকুমেন্ট আইডি, ডক টাইপ, প্রিপেইড, করপোরেট সিমসহ বিভিন্ন ধরনের গরমিল পাওয়া গেছে।