মাস দুয়েক আগেও রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারের খুঁটিগুলো (পিলার) ছিল বস্তাপচা বিজ্ঞাপনে ভরা। এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে সচেতনতামূলক বর্ণিল গ্রাফিতি। এসব গ্রাফিতি এরই মধ্যে নগরবাসীর প্রশংসা পেতে শুরু করেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, মগবাজার থেকে এ যাত্রা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা উত্তর সিটির সব ফ্লাইওভারে গ্রাফিতি করা হবে।
গ্রাফিতির পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের সময়কে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “পরিকল্পনাটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনিই আমাকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘ফ্লাইওভারের খুঁটিগুলোয় গ্রাফিতি করে সৌন্দর্য বাড়াও।’ মূলত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাথা থেকেই এসেছে এই পরিকল্পনা। আমরা শুধু বাস্তবায়ন করছি। এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।”
আতিকুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বললাম, আপা পিলারগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আইডিয়া দিয়ে বললেন, ‘তুমি পিলারগুলোর গায়ে গ্রাফিতি করে ফেলো।’”
মেয়র বলেন, ‘আর্ট করার পর দেখলাম মানুষের উচ্ছ্বাস। ঈদের দিন অনেকে ছবি তুলছে। যেখানে এক সময় প্রস্রাবের দুর্গন্ধে যাওয়া যেত না, সেখানেই এখন মানুষ দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। এটি বড় পরিবর্তন। সবার সহযোগিতা পেলে এভাবেই পরিবর্তন সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘কাজটা ব্যয়বহুল। এটা যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলসহ অনেক দেশেই আছে। আমরা চাই ধাপে ধাপে উত্তর সিটির সবগুলো পিলারে এভাবে পেইন্টিং করে দিতে।’
মেয়র বলেন, ‘শুধু রঙিন করা নয়। আমরা সেখানে বিভিন্ন বার্তা দিয়ে যাচ্ছি। হারিয়ে যাওয়া বাউল সংগীতের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছি; যেন আমাদের তরুণ প্রজন্ম বাউল গান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার লাগাবেন না, গাড়িতে অযথা হর্ন বাজাবেন না- এরকম
শিক্ষামূলক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এর পরও সেখানে যদি কেউ বিজ্ঞপ্তি দেয় বা পোস্টার লাগায়, তাহলে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানা করা হবে।’
যারা গ্রাফিতি করছেন তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে লেখাপড়া শেষ করা মো. আবু সুফিয়ান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কাজ করি। এখানে যে কাজগুলো করা হচ্ছে সেগুলো টেকসই, পরিবেশবান্ধব। প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন চিত্রশিল্পী কাজ করেন। অধিকাংশই ছাত্র। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রিকশা প্রিন্টে যুক্ত শিল্পীদের কাজে লাগানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এক একটা পিলার শেষ করতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগে। যেহেতু পিলারগুলো রাস্তার মাঝখানে, তাই দিনের বেলায় কাজ করা যায় না।
গাড়ি চালানোর সময় কালার রিফলেক্ট হয়ে দুর্ঘটনা বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কার বিষয়ে এই শিল্পী বলেন, ‘না, এটি কখনই হবে না। রিফলেক্ট করার মতো রঙ আমরা ব্যবহার করছি না।’