ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) খল নায়ক ললিত মোদির যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানো ও অভিবাসন সংক্রান্ত সুপারিশের জেরে বিরোধী পক্ষের তোপের মুখে পড়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। আর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জালিয়াতিতে অভিযুক্ত হয়েছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
কংগ্রেস, দিল্লির ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টিসহ (এএপি) বিরোধী পক্ষগুলোর অভিযোগ, ললিত মোদির যুক্তরাজ্য পাড়ি দেওয়া সহজ করে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনৈতিকভাবে তদবির করেছিলেন তিনি। আর এ তদবিরের বিনিময়ে ললিতের কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা নিয়েছিলেন সুষমা স্বরাজের স্বামী।
আত্মপক্ষ সমর্থনে সুষমা প্রথম থেকেই বলে আসছেন, মানবিক কারণেই তিনি সুপারিশ করেছিলেন। তার এ যুক্তি মেনে নিয়েছে বিজেপিও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সভাপতি অমিত শাহ এখনও সহানুভুতিশীল রয়েছেন তার ব্যাপারে। তবে মন গলেনি বিরোধীদের।
টাইমস নাউয়ের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্র সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে সরব বিরোধী পক্ষ। তার বাড়ির সামনেও র্যালি করেছে এএপি’র যুবসংঘ। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের প্রতিবাদ তো আছেই।
এদিকে, ললিতের অভিবাসন সংক্রান্ত আবেদনে সুপারিশ করে ফেঁসেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। তিনি সুপারিশ করেছিলেন এই শর্তে যে, সরকার যেন এ ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে। কিন্তু সরকার জানার আগেই সে দলিল গিয়ে পড়ে কংগ্রেসের হাতে। শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে সত্যিটা স্বীকার করে আপাতত মুখ বন্ধ রাখার পথেই হাঁটতে হচ্ছে বসুন্ধরাকে। আর এক্ষেত্রেও নরেন্দ্র মোদি কিংবা অমিত শাহ নিরবতার পথ বেছে নিয়েছেন। কারণ বসুন্ধরার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে সুষমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে জনমত গিয়ে ভিড়বে বিরোধী পক্ষের কূলে।
অপরদিকে, গোঁদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো বিঁধতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির ইস্যু। যে অভিযোগে কিছুদিন আগেই কারাগারে ঢুকেছেন দিল্লির আইনমন্ত্রী জিতেন্দর সিং তোমার, সেই অভিযোগে অভিযুক্ত স্মৃতি। বিষয়টা শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।
স্মৃতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে গড়বড় রয়েছে। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি কমিশনকে জানান, ১৯৯৬ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষার মাধ্যমে বিএ পাশ করেছেন তিনি। অথচ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কমিশনকে বলেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওপেন লার্নিং থেকে বি.কম পাশ করেছেন। ২০১১ সালেও স্মৃতি কমিশনকে তার বি.কম পাশের কথা জানিয়েছিলেন।
অভিযোগে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ২০০৪ সালের পর ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানসহ স্নাতক ডিগ্রির বিষয় পাল্টে গেল কিভাবে? আগামী ২৮ আগস্ট এ মামলার প্রথম শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। কিন্তু তার আগেই স্মৃতির পদত্যাগ দাবি করে রাজেপথে নেমে পড়েছে বিরোধী পক্ষ। বিশেষ করে, এক্ষেত্রে এএপি বেশ সক্রিয়। কারণ জিতেন্দর সিং তোমারের ক্ষেত্রে দিল্লির বিজেপির ভূমিকা ছিল কট্টর।
সব মিলিয়ে দলের তিন প্রভাবশালী নারীকে নিয়ে বেশ ঝামেলার মধ্যেই দিন পার করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এ ঝামেলার শেষ কোথায়, এখন সময় ও পরিস্থিতিই তার উত্তর করবে।