জাতীয় দলে ফিরতে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করছেন?
সাইফউদ্দিন : ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পর ঐতিহ্যবাহী একটা টুর্নামেন্ট হচ্ছে বিসিএল। আমি নর্থ জোনের হয়ে খেলেছিলাম। ওখানেও আমার বল-ব্যাট (৪ ম্যাচে ৯ উইকেট, ৫৫ রান) হাতে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স ছিল। আমি ২০২২ বিশ^কাপের পর থেকে যতগুলো টুর্নামেন্ট খেলেছি পারফর্ম মোটামুটি করেছি। শুধু এনসিএল আর বিসিএলের চার দিনের ম্যাচে মনমতো পারফর্ম হয়নি। ভালো খেললেই আমি খুশি থাকি সব সময়। আমি কখন জাতীয় দলে সুযোগ পাব বা পাব না এটা নিয়ে চিন্তা করি না।
আপনাকে সম্ভাবনাময় পেস অলরাউন্ডার হিসেবে ভাবা হচ্ছিল…
সাইফউদ্দিন : আমার ক্যারিয়ার এখন মাঝপথে না শেষের দিকে না শুরুর দিকে? ক্যারিয়ারটা সবে শুরু। ক্যারিয়ারটা শেষ করি তখন না হয় বলতে পারব কতটুকু প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছি কি পারিনি। দেশকে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব।
জাতীয় দলে ফেরা কঠিন কিনা?
সাইফউদ্দিন : ১-২ বছর আগেও আমি সাদা বলে মোটামুটি নিয়মিতই ছিলাম। এখানে স্থায়িত্ব বলতে কিছু নেই। যে মুহূর্তে যে কেউ যে কারও জায়গা নিয়ে নিতে পারে। এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত তা নয়। একজন পেস বোলার, পারফরমার, ওর চেয়েও যদি আমি ভালো করি অবশ্যই আমাকে জাতীয় দলে সুযোগ করে দেবে। যে ভালো করবে সে-ই সুযোগ পাবে।
পরিবারের সমর্থন কতটা অনুপ্রাণিত করে আপনাকে?
সাইফউদ্দিন : আমার আম্মা সব সময় একটা কথা বলেন, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। স্বাভাবিক থাক।
এত কিছু চিন্তা করার দরকার নেই। এ কথাটা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে।
এ বছর তো ওয়ানডে বিশ্বকাপ…
সাইফউদ্দিন : এটার জন্যই তো অনেক বেশি মুখিয়ে আছি। কারণ ব্যাক টু ব্যাক দুই দুইটা ওয়ার্ল্ডকাপ আমি খেলতে পারিনি। আমার জন্য কতটা কষ্টের হয়তো আমার জায়গায় বা যারা প্লেয়ার তারা বলতে পারবে। এর আগে অনেক ভালো ফর্মে ছিলাম। ইনজুরির কারণে দুবাইয়ে যেটা হয়েছিল ওখানে খেলতে পারিনি। পরেরটা অফফর্মের কারণে দল থেকে বাদ পড়ি। সত্যি এটা অনেক হতাশা এবং কষ্টের। ওই দুঃসহ স্মৃতি মনে রাখতে চাই না। চেষ্টা করব যাতে বিশ^কাপে খেলতে পারি এবং টিমের সদস্য হয়ে থাকতে পারি।
হাথুরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে?
সাইফউদ্দিন: ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এ সময় দেখা করার সুযোগ নেই। আমি ঢাকা লিগ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ভেবেছিলাম, ঈদের পর হাই-হ্যালো করব। ওরা সিলেটে কন্ডিশনিং ক্যাম্পে চলে গেছে। তিনি জাতীয় দলের হেড কোচ। অবশ্যই পুলের মধ্যে যে ২৫ জন ক্রিকেটার আছে তাদের বিষয়ে তিনি জানেন। যদি থাকি, আমাকে অবশ্যই কোনো না কোনো সময় কল করবেন। অপেক্ষায় আছি।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়া হতাশার ছিল কিনা?
সাইফউদ্দিন : খেলোয়াড়দের এ জায়গায় আবেগের কোনো জায়গা নেই। এখানে দলে সুযোগ পাওয়া সহজ কিন্তু টিকে থাকা কঠিন। পারফর্ম করে টিকে থাকতে হবে। আমি ইনজুরি থেকে উঠে এসেছিলাম। এরপর আমি এশিয়া কাপ ও নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দুটি ম্যাচ খেলেছি। আমি আমার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারিনি। তাই নির্বাচকদের আমাকে মনে হয়েছে ‘নট আপ টু দ্য মার্ক’ পারফরমার। যার কারণে আমাকে দলের বাইরে রেখেছে। এটা নিয়ে খুব বেশি হতাশ না। তখন আমি আমার ছন্দে ছিলাম না। আমি সাইফউদ্দিন বরাবর যে রকম পারফর্ম করে আসছিলাম আমার নিজেকে অচেনা মনে হচ্ছিল। সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। এখন মনে হচ্ছে আমি আমার আগের ছন্দটা পাচ্ছি। এটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে ভালো খেলতে থাকলে ধারাবাহিক পারফর্ম করতে থাকলে সামনে সুযোগ আসবে।
ক্যারিয়ার লম্বা হওয়ার পথে ইনজুরি বাধা কিনা?
সাইফউদ্দিন : একজন অ্যাথলেটের ক্ষেত্রে এটা জীবনের একটা অংশ। সব সময় এ জিনিসটা আসবেই। ইনজুরি না থাকলে হয়তো এত বেশি সিরিয়াস থাকতাম না। হয়তোবা আরও বেশি ফোকাসড হতাম না। আমি এখন (ঈদের ছুটি) বন্ধুবান্ধব বা নতুন বিয়ে করেছি, বউকে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে বের হতাম। এর আগে একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলাম, ইনজুরি আমার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। এটা নিয়ে সব সময় লড়াই করতে হবে। যার কারণে ঈদের সময়ও বসে থাকার সুযোগ নেই। বোলিং বা স্কিল নিয়ে কাজ করছি যাতে ফিট থাকি। সামনে যেহেতু অনেক খেলা, সুযোগ আসবে। এই প্রস্তুতিটা নিচ্ছি যাতে ফিট থাকতে পারি।
এখনো তো জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলা হয়নি আপনার…
সাইফউদ্দিন : অবশ্যই, টেস্টেও খেলতে চাই। যাতে ক্যারিয়ার শেষে আমি বলতে পারি বাংলাদেশ দলের হয়ে তিন সংস্করণেই আমি খেলেছি। সে চেষ্টা অবশ্যই আছে। তার চেয়ে বড় কথা হলো এক ম্যাচ খেললাম আবার দলের বাইরে চলে গেলাম, সেটা না হওয়াই বেটার। পুরোপুরি ফিট হয়ে ফিজিক্যালি আরও স্ট্রং হয়ে যাতে লং টাইম খেলতে পারি সে চেষ্টাই করছি।
এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ প্রসঙ্গে, আবাহনীর হয়ে ১০ ম্যাচে ১৮ উইকেট পেয়েছেন। প্রাথমিক পর্ব শেষে নিজের পারফরম্যান্সকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সাইফউদ্দিন : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তবে ভালোর তো কোনো শেষ নেই। যদিও ইকোনমি ৫-এর নিচে রাখা ছিল লাস্ট ৮ ম্যাচ পর্যন্ত। শেষ ২ ম্যাচ কিছুটা এক্সপেনসিভ হয়ে গেছে। উইকেট অনেক বেশি ফ্ল্যাট ছিল। যার কারণে ইকোনমিক্যাল বল করাটা একটু ডিফিকাল্ট। সুপার লিগের আগে কিছুদিন গ্যাপ ছিল। উইকেট বিশ্রাম পেয়েছে। আশা করি সুপার লিগে পেস বোলাররা উইকেট থেকে কিছুটা বেনিফিট পাবে। সুপার লিগে এখনো ৫টা ম্যাচ আছে। আরও ১০-১২ উইকেট নিয়ে মোট ৩০ উইকেট পাওয়ার আশা করছি। সে চেষ্টাই থাকবে।
তার মানে ঢাকা লিগের এ মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে চান?
সাইফউদ্দিন : অবশ্যই। চেষ্টা তো থাকবেই। কেউ জানে না, কালকে আমার বা আপনার জীবনে কী ঘটবে। যদি ব্যাক টু ব্যাক একটা ম্যাচে ৫ উইকেট, পরের ম্যাচে ৪ উইকেট পেয়ে যাই তা হলে আমার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। সে চেষ্টাই থাকবে।