সুদানে গত ১৫ এপ্রিল থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। ওই দেশে অবস্থিত আগ্রহী বাংলাদেশিদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রথম দফায় ৫০০ বাংলাদেশিকে এ মাসের শেষে জেদ্দায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, ‘খার্তুম থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা বাস ভাড়া করার চেষ্টা করছি। প্রাথমিক অবস্থায় আমাদের চেষ্টা থাকবে ১০টি বাসে ৫০০ বাংলাদেশিকে পোর্ট সুদান নামে একটি শহরে নিয়ে যাওয়া এবং সেখান থেকে একটি জাহাজ বা ফেরিতে করে নিরাপদে জেদ্দায় পৌঁছানো।’
ইতোমধ্যে যারা আসতে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে ফর্ম বিলি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জনের মতো আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
সুদানে কত বাংলাদেশি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা অনুমান করি, গোটা সুদানে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি আছেন এবং এরমধ্যে ১ হাজার ২০০ জনের মতো আছেন খার্তুমে।’
মাঠ পর্যায়ে সমস্যা
যেসব বাংলাদেশি প্রথম অবস্থায় নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তাদের অনেকে এখন অনীহা প্রকাশ করছেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা ৩০ এপ্রিলের জন্য বাস বুকিংয়ের চেষ্টা করছি। এটি এখনও নিশ্চিত করতে পারিনি। এর কারণ হচ্ছে— গতকাল (সোমবার) গোলাগুলি কিছুটা কম হয়েছে এবং সেজন্য কিছু বাংলাদেশি যেতে চাইছে না।’
সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি অর্থ দিয়ে ১০টি বাস ভাড়া করতে হবে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পরে যদি তিনটি বাস ভর্তি বাংলাদেশি যায়, তবে বিষয়টি দুঃখজনক হবে। এখানে এখন পরিস্থিতি হচ্ছে বাস যদি খালিও যায়, তাহলেও আমাদের ভাড়া দিতে হবে। এ কারণে আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য কালকে (বুধবার) পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। আশা করি, কালকে আমি মোটামুটি বলতে পারবো যে, কতজন বাংলাদেশি যাবে।’
পোর্ট সুদান
সুদানে অবস্থিত বিদেশিরা পোর্ট সুদান ব্যবহার করে নিরাপদ জায়গায় চলে যাচ্ছেন। এর ফলে সেখানে আবাস বা হোটেলের ওপর চাপ পড়ছে।
অন্যান্য দেশের দূতাবাসের অভিজ্ঞতা থেকে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অন্যান্য দেশের লোকেরও পোর্ট সুদানের মাধ্যমে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ফলে ওই শহরের ওপর বড় চাপ পড়ছে। কারণ, এত বেশি লোকের থাকার জন্য পর্যাপ্ত হোটেল সেখানে নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমার একজন অফিসারকে পোর্ট সুদানে পাঠাবো। সেখানকার কোনও একটি স্কুল বা কলেজ— যেগুলো এখন বন্ধ আছে, সেখানে বাংলাদেশিদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্য। এটা করা গেলে তাদের থাকার অসুবিধা হবে না বলে আমরা আশা করছি।’
পোর্ট সুদান থেকে বাংলাদেশিদের জেদ্দায় নেওয়ার জন্য সৌদি সরকার বিনাখরচে জাহাজ দেবে, জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করছি, পোর্ট সুদানে উপস্থিত অনেক বাংলাদেশির কাছে পাসপোর্ট বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকবে না। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে সৌদি আরব থেকে একজন বাংলাদেশি কূটনীতিককে পোর্ট সুদানে আসতে বলেছি, যাতে বাংলাদেশিরা সহজে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারেন।’
বাংলাদেশিদের অবস্থা
সুদানে যেসব বাংলাদেশি আছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ব্যবসা করেন এবং অনেকে চাকরিজীবী।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘খার্তুমে অনেক টেইলারিং শপের মালিক বাংলাদেশি। সেখানে অনেক বাংলাদেশি চাকরি করেন। এছাড়া একজন বাংলাদেশি আছেন, যিনি একটি স্টিল মিলের মালিক। ওই কোম্পানিতে প্রায় ১৮০ জন বাংলাদেশি কাজ করেন।’
রাষ্ট্রদূত জানান, আমি এখন জাজিরা শহরে আছি। এখানে একজন বাংলাদেশির কটন মিল রয়েছে।