গণতন্ত্র ও ভোটার প্রতিষ্ঠায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলন গুম, খুন, নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ এবং কারাবন্দী নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছে বিএনপি। দলের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ঈদের দিন থেকে সোমবার পর্যন্ত-এই তিন দিন এই কর্মসূচি করে দলের মহাসচিব, জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও নিবাহী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এসব নেতারা দলীয় নেতাকর্মীদের আগামী দিনের চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেন।
ঈদের দিন সকালে উত্তরায় নিজের ভাড়া বাসায় দলীয় নেতাকর্মী এবং টেলিফোনে ঠাকুরগাঁও এলাকার নেতাকর্মী ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজখবর নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঈদের দিন সকাল থেকে দিনভর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের নিজ বাসভবনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঈদ মানে আনন্দ। কিন্ত সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ এবারও আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে ঈদ করতে পারেনি। দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের ঈদ কেটেছে। এই অবস্থায় দেশের চলমান সংকট থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে উত্তরণে আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলমান এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করতে হবে। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই আন্দোলনে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে বিজয় অর্জন করা গেলেই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে।’
নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ঈদের দিন থেকে কারান্তরীণ এবং গুম, খুন ও পঙ্গুত্ববরণকারী নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজ নেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও ঈদ উপহারসহ নববর্ষ ও ঈদের শুভেচ্ছা কার্ড বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা জেলার প্রতিটি ইউনিটে একই কর্মসূচি হয়েছে।
দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি একই কর্মসূচি করছে। ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মঞ্জনু এই কর্মসূচি সার্বিকভাবে দেখভাল করেন। তারা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে, মির্জা আব্বাস ঢাকার শাহজাহানপুরে, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করেন। আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজ নেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কারাগারে ঈদ করতে হয়েছে।
ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু নোয়াখালীতে, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশালে, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরে নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করেন। সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ মুন্সীগঞ্জ, কেন্দ্রীয় নেতা এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, ফরহাদ হোসেন আজাদ পঞ্চগড়ে, আমিরুল ইসলাম খান আলীম সিরাজগঞ্জে,মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জামালপুরে, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মনির হোসেন, তাবিথ আউয়াল ও প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করেন।
রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অনেক নেতা এলাকায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। এ কারণেও অনেক নেতা ঢাকায় ঈদ করেন। তবে বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন বলেন, ‘দীর্ঘ ৫ বছর পর নিজ জন্মভূমি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকলের মটিতে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। ’নামাজ শেষে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মা-বাবা ও পূর্ব পূরুষগণের কবর জিয়ারত করেন তিনি।
মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করেন। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ঈদের দিন বিশেষ করে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নুরুল ইসলাম নয়ন, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, এস এম জিলানী, রাজীব আহসান, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাইফ মাহমুদ জুয়েল,আবুল কালাম আজাদ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ করেন। নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর নেন।
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও ঢাকা ও এলাকা মিলিয়ে ঈদ করেন। এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ নিজ এলাকা কুমিল্লার চান্দিনায় করেন। বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম ঈদ করেন লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জের করপাড়া ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে।