দীর্ঘ ১০ বছর পর বঙ্গভবন ছেড়ে রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় উঠলেন সদ্য অবসরে যাওয়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অবসর সময়টাকে তিনি তিন ভাগে ভাগ করে কাটাতে চান। তিনি বলেন, ‘অবসর সময়টাকে আমি তিনটা ভাগে ভাগ করতে চাই- ঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও আমার হাওর এলাকা। চেষ্টা করব হাওর এলাকায় বেশি থাকার।’ গতকাল সোমবার নিকুঞ্জের প্রেসিডেন্ট লজে ওঠার পর গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে এ কথা বলেন আবদুল হামিদ।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে সদ্য অবসরে যাওয়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি সারাজীবন রাজনীতি করেছি, সেটা এদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে। আমি চেষ্টা করেছি, আমার ক্ষুদ্র ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করেছি কীভাবে এদেশে সুষ্ঠু রাজনীতি প্রবর্তন করা যায়। সেটায় সফল হয়েছি এ কথা বলতে পারব না, তবে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।’
গতকাল দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে টানা দুই মেয়াদ পূর্ণ করে রাজসিক বিদায় নেন আবদুল হামিদ। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের। উপমহাদেশের ইতিহাসে তিনিই টানা ১০ বছর সফলতার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। নিজেকে সব সময় বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।
দীর্ঘ ১০ বছর বঙ্গভবনের বাসিন্দা আবদুল হামিদের নতুন ঠিকানা রাজধানীর নিকুঞ্জ-১, ‘ক’ ব্লকের ৬ নম্বর লেক রোডের ডুপলেক্স বাসা। এখানেই অবসর সময় কাটাবেন তিনি। নতুন এই বাসভবনে প্রবেশের আগে গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে কথা বলেন আবদুল হামিদ। দায়িত্ব পালনকালে সব সময় হাস্যরসের মাধ্যমে কঠিন বার্তা দিতেন আবদুল হামিদ। অবসরে যাওয়ার পরও দেশের রাজনীতির একটা বিশেষ বার্তা দিয়ে গেলেন তিনি। ভবিষ্যতে দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা দেখার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি আশা করি অদূর ভবিষ্যতে দেশে একটা সুষ্ঠু, স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকবে। বিরাজ করবে। একটা সুষ্ঠু রাজনীতি অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।’
বঙ্গভবন ছেড়ে নিকুঞ্জে পৌঁছে রাষ্ট্রপতি লজে প্রবেশের আগে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আরেক দফা কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন আবদুল হামিদ। রোদের মধ্যে কষ্ট করে গাড়িবহরের পিছু পিছু আসায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আজকের দিনে আমার যেটুকু সফলতা, এ জন্য পুরো দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার প্রতি দেশবাসীর দোয়া ছিল। আমার জেলা, আমার এলাকার মানুষেরও দোয়া ছিল আমার প্রতি। বিশেষ করে আপনাদের (সাংবাদিক) প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমি যা-ই বলেছি, টুইস্ট না করে আপনারা তা মানুষের মধ্যে তুলে ধরেছেন, এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তা ছাড়া আজকে আমি এটাও বলতে চাই- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মোটামুটি ফ্রিলি কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন, বা আমার কাজের ব্যাপারে কোনো রকম বাধার সৃষ্টি হয়নি; এ জন্য তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
অবসরে আগামী দিনগুলো কীভাবে কাটবে, সেই আভাসও দেন আবদুল হামিদ। ‘ভাটির শার্দূল’খ্যাত এ রাজনীতিক বলেন, ‘আমার বেশির ভাগ ইচ্ছে হাওর এলাকায় থাকার। ঢাকায়ও থাকতে হবে। আমার রাজনীতির চারণভূমি কিশোরগঞ্জেও সময় দেব।’ সময়টাকে আমি তিনটা ভাগে ভাগ করতে চাই- ঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও আমার হাওর এলাকা।’ গণমাধ্যমের প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার যেটুকু জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, অর্জন রয়েছে, তাতে মিডিয়ার একটা অনন্য অবদান অস্বীকার করতে পারব না। এ জন্য ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা। তিনি বলেন, আপনারা আমাকে ভালোবাসেন, আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ, যদিও রাষ্ট্রপতি হয়েছি, তবু আমি নিজেকে এদেশের একজন সাধারণ মানুষ মনে করি।’
ছয় দশকের রাজনৈতিক জীবনের দিকে ফিরে তাকিয়ে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি সারাজীবন রাজনীতি করেছি, সেটা এদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে। আমি চেষ্টা করেছি, আমার ক্ষুদ্র ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করেছি কীভাবে এদেশে সুষ্ঠু রাজনীতি প্রবর্তন করা যায়।’ তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষের কল্যাণ চাই, ভালো চাই। (তারা) সুখে থাক। সকল দিক থেকে এ দেশের মানুষ ভালো থাক।’
আবদুল হামিদের রাজনীতিতে হাতেখড়ি সেই ১৯৫৯ সালে। ১০ বছর রাষ্ট্রপতি থাকার পর এখন কী করবেন, আবার কি রাজনীতিতে ফিরবেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আর না। রাজনীতি করা এটা আমার পরিকল্পনায় নেই। দেশের মানুষ আমাকে এত বড় ইজ্জত দিয়ে মন খুলে দুই মেয়াদে তারা আমাকে রাষ্ট্রপতি করেছে। সুতরাং আবার আমি রাজনীতি করব, আবার অন্য কোনো পদে যাব- এসব করলে আমার মনে হয় এদেশের মানুষকে আমি হেয় করব। সেটা আমি করব না।’