লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জের আকাশে সকাল থেকেই ছিল ঝকঝকে রোদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা বাড়ে, তবে আগের কয়েকদিনের মতো তাপমাত্রা বেশি ছিল না।

রোদ ঝলমলে আবহাওয়ায় শোলাকিয়া ঈদগাহে আজ শনিবার সকাল ১০টায় ঈদের জামাত শুরু হয়। রোদ গায়ে মেখেই জামাতে অংশ নেয় লাখ লাখ মুসল্লি। আয়োজকরা ধারণা করছেন, এবার শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশের বৃহত্তম এ ঈদ জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করেন। রোদ উপেক্ষা করে সকাল থেকেই মুসল্লিরা এ মাঠে আসতে থাকেন। গরমের সম্ভাবনা আছে জেনেও মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়া মাঠের দিকে।

প্রচণ্ড গরমের কথা চিন্তা করে মুসুল্লিদের জন্য আগে থেকেই জেলার ইলহাম অটো রাইস মিল লিমিটেড ২০ হাজার পানির বোতলের ব্যবস্থা করে রেখেছিল। এসব পানির বোতল ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ করে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে দূর-দূরান্ত থেকে আসা টুপি পাঞ্জাবি পরা পায়ে হাঁটা মুসল্লিদের ভিড় এ বিশাল মাঠে এসে পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সুশৃঙ্খলভাবে মুসল্লিরা মাঠে এসে প্রবেশ করে। তবে মাঠে ব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে আসা নিষিদ্ধ ছিল। অন্তত ১০টি নিরাপত্তা তল্লাশির ভেতর দিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হয়েছে সবাইকে। মাঠ ও এর আশপাশে ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চার স্তরের নিরাপত্তা।

সিসি ক্যামেরায় মনিটর করা হয় মাঠের ভেতর ও চারপাশ। মাঠের চারপাশে ছিল ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। চারটি শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা মিনটর করে মাঠ ও এর আশপাশ এলাকা।

সকাল ৮টা থেকেই মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ মূল মাঠ। জামাত শুরু হলে মাঠ ছাড়িয়ে আশেপাশের রাস্তা, ফাঁকা জায়গা, বাড়ি, বাড়ির ছাদে মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে পড়েন নামাজে।

বেলা ১০টা বাজতেই ঐতিহাসিক এ জামাতের ইমাম আহ্বান জানান শোলাকিয়ার ১৯৬তম ঈদুল ফিতরের জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য।

দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট, তিন মিনিট ও এক মিনিট আগে যথাক্রমে তিনটি, দু’টি ও একটি গুলির আওয়াজ করা হয় শটগানে। এরপর শুরু হয় ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত। জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।

জেলা প্রশাসক মো: আবুল কালাম আজাদ, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো: জিল্লুর রহমান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনেরা এ জামাতে অংশ নেন।

নামাজ শেষে মুসল্লিদের জন্য দিক নির্দেশনামুলক খুতবা দেন ইমাম। এরপর কাঙ্ক্ষিত মোনাজাত।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে শোলাকিয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে শোলাকিয়া ঈদগাহের অবস্থান। প্রায় সাড়ে ছয় একর আয়তনের ঈদগাহে মাঠের ভেতরে স্বাভাবিক অবস্থায় এক লাখ ৬৫ হাজার মুসল্লির ধারণক্ষমতা রয়েছে। তবে মাঠের ভেতরেই দুই লাখের বেশি মুসল্লি ঠাসাঠাসি করে নামাজ পড়ে। আর মাঠের বাইরে রাস্তা-ঘাট ও পেছনে অংশ নেয় আরো দুই থেকে আড়াই লাখের মতো মুসল্লি। দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে শোলাকিয়া ও এর আশপাশ। এবার মুসল্লিদের অংশগ্রহণ ছিল আরো বেশি।

বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম বীর ঈশাখাঁর ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান ১৮৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য জমি ওয়াক্ফ করেন। তারও ২০০ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ওই ওয়াক্ফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে।

১৮২৮ সালে শোলাকিয়া মাঠে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *