দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে গত বুধবার থেকেই। এরপর দিন অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি মিলেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত সবার। ছুটি শেষ হবে আগামী রবি বা সোমবার। গ্রামে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দকে ভাগাভাগি করতে নিজেদের ভাড়া কিংবা নিজস্ব বাসায় তালা মেরে সপরিবারে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ।
ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে দুদিন আগে থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী ঢাকা। স্বজনের সান্নিধ্যে ঈদ করতে বাকিরাও আজ গ্রামমুুখী হলে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যাবে ঢাকা। এই সুযোগে ‘গোঁফে তা দিচ্ছে’ গ্রিল কাটা চোর, ছিনতাইকারী, ডাকাতসহ নানা ধরনের অপরাধী চক্র। একদিকে ফাঁকা রাজধানী, অন্যদিকে খালি বাসার নিরাপত্তা আবার ঢাকার সড়কে ছিনতাই প্রতিরোধ ও বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে বসে নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। এরই মধ্যে রাজধানীর ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসাবাড়ির নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি বাড়িয়েছেন। সম্প্রতি দেশব্যাপী আগুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বহু স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে মাঠে রয়েছে পুলিশ-র্যাব ও বিশেষ গোয়েন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র চুরি-ডাকাতিসহ অনাহূত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের প্রতিটি মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং প্রতিটি থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট এরিয়ায় মার্কেট এবং বাসাবাড়ির নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ নজরদারি রাখার নির্দেশনাও রয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে ঈদের ছুটিতে যাওয়া মানুষের বাসস্থান, কর্মস্থল, শপিংমলে চুরি ও ডাকাতি প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার এই সুযোগে যাতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড না ঘটে তা ঠেকাতে বিশেষ কর্মকৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে ঢাকা মহানগর পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট। ঈদকে কেন্দ্র করে সড়কে টহল বাড়ানো হয়েছে। নির্জন এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় পুলিশি টহল বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফাঁকা ঢাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়- এমন বিষয়টি সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট পরিচালনা করবে। বেপরোয়া গতির গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ছাড়াও বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চঘাট এবং বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সড়কের যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাস, ট্রেন বা লঞ্চে না ওঠার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সড়কপথে হাইওয়েতে বাসগুলো যেন রাস্তায় যাত্রী ওঠাতে না পারে, সে ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নাশকতা এবং হামলা মোকাবিলায় র্যাবের স্পেশাল ফোর্স কমান্ডো টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভার্চুয়াল জগতে যে কোনো গুজব এবং উসকানিমূলক তথ্য প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সাইবার মনিটরিং জোরদার রাখা হয়েছে বলেও জানা গেছে। র্যাব বলছে, গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার মনিটরিংসহ বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
নগরবাসীর উদ্দেশে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ফাঁকা ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র, স্বর্ণালঙ্কার না রেখে সেগুলো পরিচিত যারা ঢাকা ছেড়ে যাবেন না, তাদের বাসায় রেখে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পথে সহযাত্রী কিংবা কারও দেওয়া কোনো কিছু না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীর ৫০টি থানার প্রতিটিতে বিট পুলিশিং চালু রয়েছে। ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা যারা রাজধানী ছেড়ে যাবেন না, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সংশ্লিষ্ট বিট অফিসাররা ফাঁকা বাসা-বাড়ির বিষয়গুলো অবহিত হচ্ছেন এবং সেসব বিষয়ে আমলে নিয়ে মোটরসাইকেল টহল প্যাট্রোলিং জোরদার করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিসি, এডিসি এবং এসিদের এসব বিষয়ে তদারকি করতে নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের সিনিয়র কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার বলেন, ঈদ ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় ফায়ার সার্ভিস বিশেষ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স খ. মহিউদ্দিন আশপাশে কোনো অপরিচিত লোকজনদের আনাগোনা দেখতে পেলে ৯৯৯-এ ফোন করতে পরামর্শ দেন।