আবুসাঈদ:ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শ্রীপুরের বিভিন্ন বাজারের মার্কেট ও ফুটপাতে জমে উঠেছে বেচাকেনা। ফুটপাত ও মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়ে পা ফেলার ঠাঁই নেই। সকাল থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত চলছে কেনাকাটা। ব্যবসায়ীরা এতে সন্তুষ্ট নন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন ক্রেতারা মার্কেটে এসে শুধু পণ্য দেখে চলে যাচ্ছে। ক্রেতারা বলছেন অতিরিক্ত দামের কারণে বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে প্রতিদিনই গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের বড় বড় মার্কেটে ছুটে আসছে সকল বয়সী ক্রেতা। ক্রেতাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নারী ও শিশু। কসমেটিকস ও কাপড়ের দোকানে তাদের ভীড় বেশি। স্যালোয়ার-ওড়না এবং শাড়ির বাহারি ডিজাইনও তাদের নজর কেড়েছে। ক্রেতারা বলছেন বঙ্গ বাজারে অগ্নিকান্ডের অযুহাতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছন বিক্রেতারা। সাধ্যের বাইরে হওয়ায় দরদাম করেও খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে অনেককে। ফুটপাতের দোকান ও হকার্স মার্কেটগুলোয় ক্রেতাদের ভরসা বেশি।
শ্রীপুর পৌর শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশ, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপজেলার মাস্টারবাড়ী, সিঅ্যান্ডবি বাজার, মাওনা চৌরাস্তা, এমসি বাজার, নয়নপুর, জৈনা বাজার এলাকার ফুটপাতে চলছে কেনাবেচা। মহাসড়কের ফুটপাতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি দেখা গেছে। তবে ক্রেতারা বলেছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদের পোশাকের দাম অনেক বেশি। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডেরর পর পোশাকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন এখানের ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার কাওরাইদ এলাকা থেকে একমাত্র ছেলে ও স্বামী মাসুদকে নিয়ে মাওনা চৌরাস্তায় মার্কেট করতে এসেছেন গৃহবধূ মাহমুদা মৌসুমি। তিনি কলেন, মা-বাবা ও স্বামী সন্তানের জন্য মার্কেট করতে এসেছি। অতিরিক্ত দামের কারণে কিনতে পারছি না। পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করা নিয়ে শঙ্কিত আছি।
যদিও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের প্রভাব কিছুটা পড়েছে। তবে বাজারে সুতার দাম ও মজুরি বেড়ে যাওয়ায় পোশাকের দাম আগেই বেড়েছে। বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের পর ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে না পারায় আশপাশের পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পোশাক কিনছেন, এ জন্য বেশি দামে বিক্রি করছেন। সরেজমিনে ফুটপাতে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে সরগরম। ঈদের কেনাকাটা করতে বিক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করছেন ক্রেতারা। দাম মিললেই পছন্দের পোশাক কিনছেন তারা।
ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার ঈদ কেনাকাটায় এগিয়ে আছেন তারা। পোশাক শ্রমিক এবং স্বল্প আয়ের মানুষের মূল ভরসা ফুটপাতের দোকান। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বিক্রি ততই বাড়ছে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলছে। এ মুহুর্ত থেকে মূল বেচাকেনা শুরু হবে।
ক্রেতা তাহমিনা আক্তার শষী জানান, একটা নতুন ডিজাইনের টপস ও থ্রী-পিস পছন্দ হয়েছে। দাম বেশি মনে হচ্ছে। তারপরও কিনে নিলাম। কারণ, ভালো লাগার পোশাক পরাই তো ঈদের আনন্দ।
পোশাকের দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জৈনা বাজার এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী জয়নুদ্দিন বলেন, মজুরি বেশি ও বাজারে সুতার দাম হওয়ায় পোশাকের দাম বেড়েছে। ঈদের কেনাকাটায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ফুটপাতের বাজার এবং হকার্স মার্কেটই ভরসা। তারা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুটপাতের দোকান থেকে সাধ্যের মধ্যে ভালো পণ্যটাই কেনেন।
মাওনা চৌরাস্তা ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ারের গাউছিয়া ফ্যাশনের মালিক সেলিম শেখ বলেন, সবার নজর ঈদের পোশাকের দিকে। বাজারে শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি-সবই বিক্রি হচ্ছে। সব উৎসবেই পোশাকের দাম বাড়ে। তবে এই ঈদে একটু বেশি বেড়েছে।
শ্রীপুর থানা মোড়ে মোল্লা জেনারেল স্টোরের মালিক আমিনুল ইসলাম মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রমজানের শুরুতে যে পরিমান বেচাকেনা শুরু হয়েছিল তাতে হতাশ হয়েছিলাম। ১৫ রমজানের পর থেকে ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। আশা করছি শেষ পর্যন্ত কসমেটিক্স পণ্য ভালোই বিক্রি হবে।
শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদেরচালা এলাকার টি-ডিজাইন পোশাক কারখানার লিংকিং অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বঙ্গবাজারে অগ্নিকান্ডের পর পোশাকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন এখানের ব্যবসায়ীরা। এতে আমরা যারা পোশাক শ্রমিক তাদের জন্য কেনাকাটা করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আমরা অল্প টাকা বেতন পাই। এই আয় দিয়ে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানের জন্য ঈদের জামাকাপড় কিনতে হয়। পোশাকের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজেট অনুযায়ী কিনতে পারছি না। পড়েছি বেকায়দায়।
মাওনা চৌরাস্তা ইয়াকুব আলী মাস্টার টাওয়ারে মা ফ্যাশনে কথা হয় ক্রেতা মাহবুব হাসান শরিফের সাথে। তিনি বলেন, অন্য বছরের তুলনায় দাম একটু বেশি। পরিবারে আমরা দুই ভাই ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। দাম হলেও দুই ভাই দুইটা পাঞ্জাবি ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর জন্য একটা থ্রী পিছ ও শাড়ি কিনেছি।
ফুটপাতের দোকানদার সাইফুল ইসলাম (লাল মিয়া) জানান, নিজেরাই ব্যবসা করি। এতে লাইটিং ব্যবস্থা ও কর্মচারীর বেতনসহ বিভিন্ন ধরনের খরচ হয় না। তাই স্বল্প লাভে বড় দোকানের তুলনায় কম দামে পোশাক বিক্রি করতে পারি।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজা আর প্রচন্ড গরমের কারণে ইফতারের আগে ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা কম থাকে। ইফতারের পর ভিড় ও বেচাকেনা বেশি হয়। ইতোমধ্যে যারা বেতন-বোনাস পেয়েছেন, তারা আগেভাগেই কেনাকাটা শুরু করেছেন।
শ্রীপুরের মধ্যবাজারে (কাজী মার্কেটের) সামনে শিশুদের পোশাক বিক্রি করেন মনসুর আলী। তিনি বলেন, আমার মতো ফুটপাতের অনেক ব্যবসায়ী বঙ্গবাজার থেকে পাইকারি দরে পোশাক কিনে বিক্রি করেন। আগুন লাগার পর আমরা এখন আর ঢাকায় যাচ্ছি না। খোঁজ নিয়ে জেনেছি ঢাকার সব পাইকারি বাজারে পোশাকের দাম বেড়েছে। এ জন্য গাজীপুর কিংবা আশপাশের বাজার থেকে পাইকারিতে পোশাক এনে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা বেশি নিচ্ছি ক্রেতাদের এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তবে বেশি দামে কিনছি বলে বেশি দামে বিক্রি করছি। তবু কিছুটা লাভ হলেই আমরা পণ্য ছেড়ে দিচ্ছি। আমাদেরও তো স্ত্রী-সন্তান আছে, তাদেরকে নিয়ে ঈদ করতে হবে। একটু লাভ না করলে আমরা চলবো কীভাবে?
শ্রীপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতি আমানুল ইসলাম বলেন, ক্রেতাদের ভিড় হচ্ছে এটা সত্য। একজনের জন্য জামা কিনতে সঙ্গে আসছেন ৩-৪ জন। তাদের মধ্যে অনেকে পোশাক দেখে দরদাম করে ফিরে যাচ্ছেন। সেজন্য বেচাকেনার অবস্থা ভালো বলা যাচ্ছে না।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।