ঢাকা: বগি মেরামতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আসন্ন ঈদে ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য ১৬৯টি বগি সংযোজনের সিদ্ধান্ত থাকলেও তার অর্ধেকও মেরামত হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে এগুলো মেরামত করে ঈদের স্পেশাল ট্রেনে সংযোজন করা যাবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রেনের বগি ও ইঞ্জিন সংকট মোকাবিলা না করে যাত্রী ভোগান্তি কোনোভাবেই দূর করা সম্ভব হবে না। এসব বগি নির্দিষ্ট সময়ে সংযোজন করা না গেলে বড় ধরণের দুর্ভোগে পড়বে ঈদে ঘরমুখো মানুষ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঈদে যাত্রীসেবার জন্য পাহাড়তলী ওয়ার্কসপ থেকে ৮৬টি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ৮৩টিসহ মোট ১৬৯টি পুরনো ও জরাজীর্ণ বগি সংস্কার ও মেরামত করেই সেগুলো সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেয় রেলওয়ে। ১৫ মে থেকে ১২ জুলাই মোট ৫৯ দিনের মধ্যে কোচগুলো মেরামত করে লাইনে দেওয়ার কথা থাকলেও এ পর্য্যন্ত (২৬ জুন) দুই ওয়ার্কশপে মোট ৮২টি বগি মেরামত করা হয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দপুরে ৪০টি আর পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে ৪২টি বগি সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আসন্ন ঈদে পুরাতন ২৫টি ইঞ্জিন মেরামত করে সরবরাহের কথা বলা হলেও এ পর্য্যন্ত ১৮টি ইঞ্জিন চলানোর উপযোগী করে তোলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’টি ওয়ার্কশপেই লোকবল সংকট রয়েছে। আবার যেসব কর্মী রয়েছেন তাদের বড় একটি অংশ দক্ষ নয়। এ অবস্থায় দিনে একটির বেশি কোচ মেরামত শেষ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। স্বল্প সম্পদের মধ্যে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ে বগি সংযোজন করতে বর্তমানে ওয়ার্কশপে কাজ চলছে।
রেলওয়ের পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ওয়ার্কশপে যেভাবে বগি মেরামতের কাজ চলছে তাতে টার্গেট অনুযায়ী বগি সংযোজন করা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ যে ২৫টি ইঞ্জিন মেরামত করে নামানোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর গতিও অনেক কম থাকবে।
সৈয়দপুর ওয়ার্কশপের বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক নূর হোসেন জানান, পর্যাপ্ত জনবল ও উপযুক্ত যন্ত্রপাতির সরবরাহ না থাকায় সংস্কার কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
পাহাড়তলী রেল ওয়ার্কসপ সূত্রে জানা গেছে, সেখানকার বিভিন্ন শপে পুরোদমে চলছে কোচ মেরামতের কাজ। কোনো শপে চলছে ডেন্টিংয়ের কাজ, আবার কোনোটিতে চলছে পেইন্টিংয়ের কাজ। কারিগররা ব্যস্ত নিজ নিজ কাজ নিয়ে।
প্রশাসনিক হিসাব অনুযায়ী, এ ওয়ার্কশপে জনবলের সংখ্যা এক হাজার ৭শ’ ৮০ জন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাজ করেছেন এক হাজার ১শ’ ৬৮ জন। যা মঞ্জুরীকৃত জনবলের চেয়ে ৬শ’ ১২ জন কম। আবার বর্তমানে যে লোকবল রয়েছে তার বড় একটি অংশ সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ নয়। ফলে কাজে তার প্রভাব পড়ছে। তারপরও মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া টার্গেট অনুযায়ী পুরনো কোচ চলাচলের উপযোগী করতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ওয়ার্কশপের কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। একই চিত্র সৈয়দপুর ওয়ার্কশপেও।
ওয়ার্কশপ দু’টিতে কর্মরতরা জানান, রেলের বগি ও ইঞ্জিন মেরামতের ৪শ’ ৫০ ধরনের যন্ত্রাংশ ও পণ্য দরকার। এর মধ্যে ১শ’ ৫টি পণ্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাটাগরির আওতায় রয়েছে। বর্তমানে এমএস শিট, চাকা, স্প্রিং, ফ্লোরিং কম্পোজিশন (বগিতে ফ্লোর কার্পেটিংয়ের সিমেন্টজাতীয় উপাদান) ও বিদেশি জমাট খনিজ কয়লার অভাবে শপের অভ্যন্তরে রাখা বেশ কিছু বগি সম্পূর্ণ মেরামত করা যাচ্ছে না।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঈদের তিন দিন আগে থেকে পরের সাত দিন পর্যন্ত ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৫ থেকে ১৭ জুলাই এবং ২০ থেকে ২৬ জুলাই এ পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন ঈদ উপলক্ষে চলাচল করবে। এগুলো ছাড়াও ঈদের দিন শোলাকিয়া স্পেশাল নামে আরও দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করবে।
ঈদের স্পেশাল ট্রেনগুলো হলো, দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল, চাঁদপুর স্পেশাল, পার্বতীপুর স্পেশাল এবং খুলনা স্পেশাল।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে রেলওয়ে। এবার ঈদের আগে প্রতিদিন অন্তত আড়াই লাখ যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে কর্মপদ্ধতি ঠিক করছেন কর্মকর্তারা। তবে এ কর্মপদ্ধতি বাস্তবায়ন শেষ পর্যন্ত বগিতেই আটকে থাকে কি-না, তা নিয়ে সংশয় এখনও কাটছে না।