দেশে চলছে ভয়াবহ তাপদাহ। ঢাকায় গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। আর এই তীব্র তাপদাহের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে রামপাল, আশুগঞ্জ নর্থ ও আশুগঞ্জ ইস্ট- এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র কারিগরি ত্রুটির কারণে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। এ তিনটি কেন্দ্র থেকে এক হাজার ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। এগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এমনিতেই প্রচণ্ড গরমের কারণে ঘরে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে, এর ওপর লোডশেডিংয়ের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন এক হাজার মেগাওয়াট কম রয়েছে। কিন্তু সারা দেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কোথাও কোথাও একটানা এক ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনে-রাতে ছয়-সাতবার লোডশেডিং হচ্ছে।
পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) মো: শামীম হাসান গতকাল লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বলেন, এমনিতেই গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে, সেই সাথে ঈদ সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশের সব জায়গার বিপণিবিতানগুলোতে এসি চালানো হচ্ছে। এসব কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো আশুগঞ্জ নর্থে এবং ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো আশুগঞ্জ ইস্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এ দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এর সাথে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো সেটিও হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে এক হাজার ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম সরবরাহ হচ্ছে। তিনি বলেন, রোববার সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৯৯ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় ঘাটতি দেখানো হয়েছে এক হাজার এক মেগাওয়াট।
এ দিকে গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে অস্বাভাবিক তাপদাহ বিরাজ করছে। প্রতিদিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ছে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কিন্তু গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছে গেছে। দিনে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাতে মশার যন্ত্রণা। পাশাপাশি গরমের সাথে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় সারারাতই নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে নগরবাসীর। আমিনুল ইসলাম নামে রামপুরার এক বাসিন্দা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, দিনে গরমের কারণে বাসায় না থেকে চাইলে এদিক-সেদিক ঘোরা যায়। কিন্তু রাতে তো ঠিকই ঘরে যেতে হয়। ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তখন ঘরে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। রাতে এমনিতেই ফ্যানের বাতাসে কাজ হয় না। তার ওপর লোডশেডিংয়ে এ দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। ছোট বাচ্চা নিয়ে রাত কাটে অনেকটাই নির্ঘুম।
পানির জন্য হাহাকার : বাড়ছে জ্বর ডায়রিয়া
প্রচণ্ড গরম অব্যাহত। এর সাথে আবার শুরু হয়েছে ঘাম ঝরা। গরমে ও ঘামে কাহিল অবস্থা মানুষের। তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে মাটির নিচের পানির স্তর নেমে গেছে আরো নিচে। ফলে শুধু শহরে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে পানির জন্য হাহাকার। মাটির কম গভীরে বসানো অনেক টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডিপ টিউবওয়েলেও পানি কম উঠছে। ফলে কিছু কিছু এলাকায় পানি রেশনিং করা হচ্ছে। বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের বলে দিচ্ছেন পানি জমিয়ে রাখতে, যেকোনো সময় পানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গতকাল সারা দেশে সার্বিকভাবে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরমের অনুভূতি আগের মতোই। এর সাথে যোগ হয়েছে ভ্যাপসা গরম। কারণ ইতোমধ্যে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়েছে, একই সাথে বেড়েছে মেঘের আনা-গোনা। বাতাসে আর্দ্রতা ও আকাশে ছাড়া ছাড়া মেঘ থাকলে তাপ সাময়িকভাবে কমে যেতে থাকে এবং বাড়িয়ে দেয় ভ্যাপসা গরম।
তাপ প্রবাহ চলছে, এমন বিভাগের মধ্যে খুলনা, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি। গতকাল থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা বেড়েছে। দেশের মধ্যাঞ্চলে ঢাকা বিভাগের অবস্থান হলেও এই বিভাগের কয়েকটি জেলায় তীব্র তাপ প্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) বিরাজ করছে। আর খুলনা বিভাগের সবগুলো জেলায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। গতকাল কিছু আর্দ্রতা ও আকাশে মেঘ থাকার কারণে তাপ কম থাকলেও আজ সোমবার তাপ আরো বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গা শহরে। এই দুই শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবারের চেয়ে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গতকাল। তবে পুরো রাজধানী শহরের চিত্র নয়। এটা কেবল আবহাওয়া অফিসের আগারগাঁও কেন্দ্রে স্থাপিত তাপমান যন্ত্রে উঠা তাপমাত্রা। ঢাকার ব্যস্ততম এলাকায় যেমন যানবাহন বেশি আবার সেখানে অফিসের সংখ্যাও বেশি। একে তো খুবই অল্প জায়গায় বেশি মানুষের অবস্থান অন্য দিকে ব্যস্ততম এলাকার অফিস ঠাণ্ডা করতে রয়েছে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সাথে ছোট ছোট এসি মেশিন। এসব মেশিন ভেতরে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত করে অফিসের ভেতরটা ঠাণ্ডা করলেও বাইরে ছেড়ে দিচ্ছে গরম হাওয়া। ফলে বাইরের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যাচ্ছে। সে কারণে অফিস পাড়ার তাপমাত্রা আরো বেশি। বলা হচ্ছে, ঢাকার মতিঝিল, দিলকুশা, পল্টন, গুলশান, বাননীর মতো অফিসপাড়ায় প্রচণ্ড গরম।
গরমে শুরু হয়েছে জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। মহাখালীর আইসিডিডিআরবিসহ সবগুলো হাসপাতালেই ডায়রিয়ার রোগীর জন্য বেড বাড়ানো হয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে প্রকোপটা বেশি। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, গরমের মধ্যে কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া পাতলা পায়খানার জন্য দায়ী। এই জীবাণুগুলো খাবার হজম হতে দেয় না।
গরমে অনেকের মধ্যে পানি শূন্যতা দেখা দিচ্ছে। এই পানি শূন্যতা থেকে হিটস্ট্রোক হচ্ছে অনেকের। রোজার মধ্যে দিনের বেলা পানাহার না করতে পারলেও ইফতারের পর পেটভরে পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মনে রাখতে হবে গরম যতই থাকুক পেটে পানি থাকলেও হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে এখন গড়ে সাড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ মতো ডায়রিয়ার রোগী আসছে চিকিৎসা নিতে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইসিডিডিআরবিতে সাড়ে ৩০০-এর কাছাকাছি ডায়রিয়ার রোগী এসেছে। এ দিকে গরম বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীতে খাবার স্যালাইনের বিক্রি বেড়ে গেছে। সচেতন অনেকেই ইফতারের মধ্যে পানি শূন্যতারোধ করতে ও শরীরের গ্লোকোজের পরিমাণ বাড়াতে খাবার স্যালাইন পান করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, খাবার স্যালাইন খাওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের জন্য খাবার স্যালাইন ক্ষতির কারণও হতে পারে। এতে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
ঢাকায় ৫৮ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল ঢাকায় ৫৮ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বেলা ১টায় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ১৯৬৫ সালে রাজধানীবাসী সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন পার করেছিল। তখন ঢাকার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ১৯৬০ সালে ঢাকায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছিল।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়ার অবস্থা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী বেড়েই চলেছে তাপমাত্রা। গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই ১ থেকে ২ ডিগ্রি করে বাড়ছে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা এই হারে বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক দিনে তা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদফতর।
গরম ও লোডশেডিংয়ে নাকাল ফরিদপুরের মানুষ
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, এক দিকে তীব্র তাপদাহ, অন্য দিকে বিদ্যুতের চরম লোডশেডিংয়ে ফরিদপুরে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ থাকছে না সাহরি, ইফতারির সময়ে, এমনকি মধ্যরাতেও দীর্ঘক্ষণ। গত কয়েক দিন তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে লোডশেডিংও। এ কারণে কৃষিপ্রধান ফরিদপুরে ক্ষেতের ফসল ফেটে চৌচির। পাটবীজ বপন করে ক্ষতির মুখে কৃষকেরা। দিনমজুরেরা কাজে যেতে পারছেন না। প্রচণ্ড গরম আর লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যও জমছে না ঈদবাজারে। অপর দিকে সরকারি হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।
ফরিদপুরে গতকাল রোববার তাপমাত্রার পারদ মধ্য দুপুরের আগেই ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছে যায়। দুপুর ১২টায় ফরিদপুরের তাপমাত্রা রেকর্ডের এই তথ্য জানান আবহাওয়া দফতরের সহকারী জাহাঙ্গীর হোসেন। এর আগে গত শুক্রবার ফরিদপুরে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
গত কয়েক দিনের এই খরায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষেতের ফসল নিয়ে কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে পাটপ্রধান অঞ্চল ফরিদপুরের পাটচাষিরা বিপাকে পড়েছেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সাতৈর এলাকার আলী আকবর জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে ধান, পাটসহ সব ধরনের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিনে যেমন গরম পড়ছে, তেমনি রাতে আবার মেঘমুক্ত আকাশ থেকে ঠাণ্ডা পড়ছে। এ কারণে ধানের ব্লাস্ট রোগ হয়ে ধানে চিটা হয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে অফিস-আদালত ও হাটবাজারে গরমের কারণে জনচলাচল কমে গেছে। রিকশাওয়ালারাও যাত্রী পাচ্ছেন না।
ফরিদপুরের ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক মো: আবু হাসান জানান, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছি না। এতে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তিনি জানান, শহর এলাকার জন্য কোমরপুর গ্রিড স্টেশন থেকে চাহিদা রয়েছে ১৯ মেগাওয়াট। সেখানে গত দুই দিনে ১১ থেকে ১২ মেগাওয়াট সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। জেলায় বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান। ওজোপাডিকোর একজন কর্মকর্তা জানান, ফরিদপুরে প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। সরবরাহ না বাড়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিকে শহরবাসী জানান, তারা বিদ্যুতের অভাবে নিদারুণ দুর্ভোগের শিকার। রাতেও ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত একনাগাড়ে বিদ্যুৎ ছিল না শহরের বিরাট অংশজুড়ে।
বগুড়ায় অসহনীয় জনজীবন
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় অব্যাহত তাপপ্রবাহের সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিং জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত তিন-চার দিন ধরে যখন তখন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। শনিবার ও রোববার দিন ও রাতে মিলে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিশেষ করে শনিবার রাতে প্রচণ্ড গরমের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না পেয়ে মানুষ ঘুমাতে পারেনি। সারারাত রোজাদাররা ছটফট করেছে। গত কয়েক দিনের লোডশেডিংয়ের ফলে রোজাদাররা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন নেসকো লিমিটেড বগুড়ায় লোডশেডিংয়ের কারণ জানাতে পারছে না। তবে তারা রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখা হয় বলে দাবি করেছে।
নোয়াখালীতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র তাপদাহে মানুষ যখন হাঁপিয়ে উঠছে ঠিক তখনই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮-১৯ ঘণ্টাই লোডশেডিং করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ছুটির দিনেও লোডশেডিং চলছে সমানতালে। শনিবার রাত ও দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছয় ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ ছিল না বলে গ্রাহকদের দাবি। ইফতারি, তারাবি ও সাহরির অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় রোজাদারদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে দারুণভাবে। সবচেয়ে বেশি লোডশেডিংয়ের যাঁতাকলে পড়ছে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের ছয় লক্ষাধিক গ্রাহক। জেলা সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, সেনবাগ কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় রয়েছে পল্লী বিদ্যুতের ছয় লক্ষাধিক গ্রাহক। জেলা শহর মাইজদী ও জেলার প্রধান বাণিজ্য চৌমুহনীতে পিডিবির রয়েছে ৩৯ হাজার গ্রাহক। সম্প্রতি তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক তখনই বিদ্যুতের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। এ দিকে এ বিষয়ে জানতে নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মো: জাকির হোসেনকে বারবার ফোন দেয়া হয়। কিন্তু ফোন রিসিভ না হওয়ায় তার মতামত নেয়া যায়নি।
রাজাপুরে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং
রাজাপুর (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির রাজাপুরে গতকাল গভীর রাতে ও দিনে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকায় জনজীবন এই তীব্র গরমে আরো ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। সারা দেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। এ সময় অতি কষ্ট করে রোজাদাররা রোজা রাখছেন। দিনে অসহ্য গরমে রোজাদার মানুষেরা হাঁসফাঁস করছেন। গত শনিবার গভীররাতে বিদ্র্যত চলে যায়। এলাকার মানুষ গরমে ঘুমাতে পারেনি। সাহরি খাওয়া প্রায় শেষ এ সময় বিদ্যুৎ আসে। গতকাল রোববার দুপুরে প্রায় তিন ঘণ্টা এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় রোজাদার মানুষের জোহরের নামাজ আদায় করতে খুবই কষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমে এলাকায় শিশুরা জ্বর, কাশি, পেটের সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এজিএম মধুসূদন রায় বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি আছে, তাই নিয়মিত বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। হয়তো ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত লোডশেডিং দেয়া লাগতে পারে।