বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ঢাকায় যাচ্ছে নাতি। দাদির কাছে বিদায় নিতে গেলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন দাদি। কিন্তু তার মন খারাপ। বললেন, পড়াশোনা করতে অত দূর ঢাকা যাবার কী দরকার! এর চেয়ে লন্ডন যাওয়া তো সোজা ছিল!
সিলেটে এই কৌতুক বেশ প্রচলিত। এখনো সিলেটের অনেকের ধারনা ঢাকা অনেক দূর কিন্তু লন্ডন ঘরে কাছেই। আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিলেট সিটি করপোরেশনকে ঘিরে আবারও আলোচনায় এসেছে ‘সিলেট-লন্ডন কানেকশন’।
তফশিল ঘোষণার পরই সিলেট ছাড়েন সিলেটে সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এক সপ্তাহ লন্ডনে অবস্থান শেষে ‘সিগন্যাল’নিয়ে আজ রোববার সিলেটে ফিরেছেন তিনি। তবে এই ‘সিগন্যাল’ লাল না সবুজ তা এখনো খোলাসা করেননি তিনি।
আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তবে এই নগরের জনগণের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে আমি অবহিত আছি। তাদের এই চাওয়া-পাওয়ার মূল্যায়ন আমি করব।’
মেয়র বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তিনি আমাকে একটি সিগন্যাল দিয়েছেন। তিনি কি সিগন্যাল দিয়েছেন তা অচিরেই আমি খোলাসা করব। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে আমার অবস্থান দ্রুত স্পষ্ট করব।’
সিলেট ফেরার আগে লন্ডন থেকে রোববার সকালে ঢাকায় নামেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির এই সদস্য। সেখানে তিনি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এরপর বিমানযোগে সিলেট যান। দুপুরে বিমানবন্দরে তাকে দলের নেতাকর্মীরা সংবর্ধনা প্রদান করেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নেও সেই লন্ডন কানেকশন। করোনা আক্রান্ত হয়ে টানা দুই মেয়াদের মেয়র ও সিলেটের জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন কামরানের মৃত্যুর পর দীর্ঘ দিন ধরে সিলেটে রাজনীতি করে আসা নেতারা স্বপ্ন দেখছিলেন আওয়ামী লীগের টিকেটে নগরকর্তার চেয়ারে বসার। এর মধ্যে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা নেতারা যেমন আছেন, তেমন আছেন টানা ২০ বছর ধরে সিটি কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসা নেতারাও। তবে সিলেট আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা প্রার্থীদের টেক্কা দিয়ে লন্ডন থেকে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
বিএনপির নির্দেশনা মেনে আরিফুল হক চৌধুরী সিটি নির্বাচনে অংশ না নিলে আনোয়ারুজ্জামানকেই সিলেটে সিটি করপোরেশন পরবর্তী কর্তা ভাবা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাধা হতে পারে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন না, এটি মোটামুটি নিশ্চিত।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমেদ। আনোয়ারুজ্জামানের মনোনয়ন নিশ্চিতের পর তিনি তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনাই শেষ কথা। তিনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বুঝে-শুনেই নিয়েছেন। নেতাকর্মীদের কাজ হবে দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদও মনে করছেন, ‘প্রবাসী নেতা মনোনয়ন পেলেও নেতাকর্মীরা দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অনুগত ও আন্তরিক থাকবে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত একেবারে ফাঁকা মাঠ পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে এখনো প্রত্যয়ী আরিফুল হক চৌধুরী। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কারের হুমকিকেও ভয় পাচ্ছেন না তিনি।
তবে সিটি নির্বাচন থেকে সরে এলেও সিলেট-১ আসনে দলীয় প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে আগ্রহী আরিফ।