ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে হ্যাটট্রিকের পথে লিটন?

Slider রাজশাহী


আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি কি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হ্যাটট্রিক করতে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মহানগরবাসীর মনে। বিএনপি এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দিতে চায় না- তা শুরু থেকে বলে আসছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরাও আলাদা করে দলীয় মেয়র প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে না। ফলে বর্তমান মেয়র লিটন আবারও নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, তা অনেকটাই নিশ্চিত।

যদিও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, তিনি ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চান না। খেলেই গোল দিতে চান। এ জন্য জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তিনি চান বিএনপিও নির্বাচনে আসুক। জনগণের কাছে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিক তারা।

মনোনয়ন পাওয়ার পাওয়ার আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন খায়রুজ্জামান লিটন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার সব সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জিতে আসতে বলেছেন। গত পাঁচ বছরে যেভাবে রাজশাহীর উন্নয়ন করেছি, মানুষের সেবা করেছি তাতে নগরবাসী আমাকে আবারও নির্বাচিত করবেন। সেই বিশ্বাস শহরের মানুষের প্রতি আমার আছে।’

লিটন, ‘আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী সর্ববৃহৎ দল। এখানে যে কারো জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা থাকতেই পারে। তাই মেয়রপদে হয়তো একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। রাজশাহীতে দলের অভ্যন্তরে কোনো বিভেদ নেই। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একত্রে কাজ করতে চাই। এজন্য সবাইকে এই আহ্বান জানাচ্ছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন, ‘আমরা সবসময়ই বিএনপিকে ভোটের আসার আহ্বান জানিয়ে আসছি। কিন্তু তারা না এলে আমাদের কিছু করার নেই। আর ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সাথে শিগগিরই আমরা বসব। তারাও নিশ্চয়ই আমাকেই সমর্থন দেবে। এনিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

মেয়র প্রার্থী হতে মহানগর আওয়ামী লীগের আরও দুই নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন। তারা হলেন সহ-সভাপতি মাহফুজুল আলম লোটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। তাদের এই সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে নৌকার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রত্যাশা যে কারোর থাকতেই পারে। তবে প্রার্থী ঠিক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারো এখন নৌকার বিরোধিতা করা উচিত হবে না। আমি চাই, সবাই এক হয়েই কাজ করবেন।’

এদিকে, সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও বিএনপির কাউকে দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মেয়র পদে মনোনয়ন উত্তোলন করেছিলেন সুইট। যদিও শেষ মুহূর্তে তা প্রত্যাহার করে নেন। এবারও সুইট ভোটের মাঠে নামতে পারেন বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

তবে সুইট তা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি কোনো নির্বাচন করবেন না। আর বিএনপি এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থীও দেবে না বলে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত আছেন। নির্বাচন নিয়ে তিনি ভাবছেন না।

এদিকে, অতীতে সিটি নির্বাচনে রাজশাহীতে কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোটের মাঠে নামতে দেখা গেলেও এবার এখন পর্যন্ত তাদেরও খবর নেই।

২০১৩ সালে সিটি নির্বাচনে লিটনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এবার নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনে আছে। এই সরকারের আমলে জাতীয় হোক আর স্থানীয় সরকার হোক- কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা ভোট করছি না।’

এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে আনারস প্রতীকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বুলবুল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে রাজশাহী সিটির মেয়র হন। এর আগে ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে হারিয়ে প্রথমবার রাজশাহী সিটি মেয়র নির্বাচিত হন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *