গাজীপুর: আসছে ২৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটির তৃতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলাদেশের মধ্যে আওয়ামীলীগের দলীয় সর্বোচ্চ মনোনয়ন প্রার্থী গাজীপুরে। সব মিলিয়ে গাজীপুরে মেয়র প্রার্থী ১৯জন।
গেলো দুটি নির্বাচনে গাজীপুর সদর থেকে মেয়র হলেও প্রায় অর্ধেক সময় মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন টঙ্গীর কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। গাজীপুরে মেয়র হলেও প্রায় অর্ধেক সময় টঙ্গীর মেয়র হয়ে যাওয়ায় অনেকে বলছেন এবার লড়াই হবে টঙ্গী বনাম গাজীপুরের মধ্যে।
সাধরণ ভোটাররা বলছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র হয় গাজীপুর সদরের বাসিন্দা। কিন্তু দুই বারই মেয়র ছিটকে পড়ে যায় আর দায়িত্ব চলে যায় টঙ্গীর কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণের উপর। মেয়র না হয়েও দুই মেয়াদের মধ্যে প্রায় এক মেয়াদেই কিরণ মেয়রের দায়িত্ব পালন করায় এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, গাজীপুর সদরে ভোট দেব! না টঙ্গীতে চলে যায় বলে টঙ্গীতেই দেব! এই প্রশ্ন এখন নগরীর চারিদিকে।
২৫ মে গাজীপুর সিটির তৃতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে ইতোমধ্যে প্রায় দুই ডজন প্রার্থী মাঠে এসেছেন। তাদের মধ্যে গাজীপুর সদর থেকে যারা মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন তারা হলেন, দ্বিতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল, বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ হারুন অর রশীদ, আব্দুল আলীম মোল্লাহ, মোঃ আশরাফুজ্জামান সেলিম, রিয়াজ মাহমুদ আয়নাল, মোঃ আজহারুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল কাদের, মোঃ রুহুল আমিন মন্ডল।
টঙ্গী থেকে যারা মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন তারা হলেন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা মতিউর রহমান মতি, গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, আওয়ামীলীগের কর্মী মেজবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলয়াস আহম্মেদ।
জাতীয় পার্টির গাজীপুর মহানগরের সভাপতি এম এম নিয়াজ উদ্দিন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রিয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
তবে কতজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন চূড়ান্তভাবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৮মে পর্যন্ত।
এদিকে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনের মেয়র বিএনপির প্রয়াত নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নান এবং দ্বিতীয় নির্বাচনের মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারে বসলেও তাদের প্রায় অর্ধেক সময় চেয়ারের বাইরে থাকতে হয়। দুই মেয়র চেয়ারের বাইরে থাকার সময়ে মেয়রের চেয়ারে ছিলেন কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ। মেয়র পদে নির্বাচন না করেই প্রায় এক মেয়াদ সময়ে মেয়রের দায়িত্ব পালন করায় আসাদুর রহমান কিরণ এবার মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। মেয়র পদে নির্বাচন করা ছাড়াই যেহেতু দায়িত্ব পালন করতে হয়ে তাই তাকে ভোট দেয়াই ভালো বলে ভাবছেন অনেক ভোটার। প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়রের বাড়ি গাজীপুর আর কিরণের বাড়ি টঙ্গী হওয়ায় এবার লড়াই হচ্ছে গাজীপুর না টঙ্গী থেকে মেয়র হবে! সিদ্ধান্ত জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৫ মে পর্যন্ত।
ভোটাররা বলছেন, আওয়ামীলীগের দলীয় প্রতীক পাওয়ার পর নতুন সমীকরণ করতে হবে। পাল্টে যাবে সব হিসেব-নিকাশ। বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে আসছে না তাই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর নৌকার সাথে কোন প্রার্থীর লড়াই হবে তা বুঝা মুশকিল। নৌকার সাথে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে লড়াই হবে। আর না হলে নৌকার সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার লড়াই হতে পারে। মূল প্রতিদ্বন্ধিতা কার সাথে কার এবং মেয়র পদে কয়জন প্রার্থী তা জানতে অপেক্ষা শুধু ৮মের।
প্রসঙ্গত: গাজীপুর সিটিতে প্রথম ভোট হয় ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। দ্বিতীয় ভোট হয় ২০১৮ সালের ২৭ জুন। তৃতীয় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ২৫ মে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৭ এপ্রিল। বাছাই ৩০ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ মে।
গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৩৩ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৪২৫টি।
গাজীপুর সিটিকর্পোরেশনে মোট ৫৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। ৫৭জন পুরুষ ও ১৯জন নারী কাউন্সিলর সহ এই নগর সরকারের সদস্য সংখ্যা ৭৭জন। এর মধ্যে গাজীপুর সদরে ৪২টি ওয়ার্ড ও টঙ্গীতে ১৫টি ওয়ার্ড অবস্থিত।