জয়ের জন্য ১ বলে ১ রান দরকার। স্ট্রাইকে ছিলেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। বল প্যাডে লাগার পরেই দৌড় দেন। পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখেন অপরপ্রান্তে খালেদ মাসুদ পাইলট পৌঁছে গেছেন। এর পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। সাবের হোসেন চৌধুরী জড়িয়ে ধরলে হুশ ফেরে তার। কুয়ালালামপুরের কিলাত ক্লাবে কেনিয়াকে হারানোর আনন্দ ছুঁয়ে যায় বাংলাদেশের মানুষকেও। আজ সেই ১২ এপ্রিল, যেদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ২৬ বছর পর আবারও হাসিবুল হোসেন শান্ত নতুন করে স্মৃতি রোমন্থন করলেন মাইদুল আলম বাবুর সঙ্গে
আইসিসি ট্রফি জয়ের স্মৃতি তো ভোলার নয়; শেষ বলে কী হলো আবার যদি বলতেন…?
শান্ত : ক্রিকেটার হিসেবে দেশের হয়ে কোনো অর্জন বড় ব্যাপার আমার কাছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আইসিসি ট্রফি জয়ের চেষ্টা করে সেবার সফল হয়। আর জয়সূচক রানটি আবার এসেছে আমার কাছ থেকে। সেই স্মৃতি আমি কোনো দিন ভুলব না। ১ বলে ১ রান দরকার। পাইলট আমাকে বলল যাইহোক না কেন দৌড় দিতে। আমিও বল প্যাডে লাগার সঙ্গে সঙ্গে এ পাশে চলে আসি। পেছনে ফিরে দেখে সে চলে গেছে। আমার মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল সেই সময়। এমন অর্জনে কিছু সময় আমার মাথা কাজ করেনি। বাংলাদেশি প্রবাসী সমর্থকরা মাঠে প্রবেশ করেন আনন্দে। মানুষের এত ভালোবাসা আজও ভুলিনি। সাবের হোসেন চৌধুরী আমাকে জড়িয়ে ধরেন। আমি সেই সময় ভাবছিলাম একটা স্টাম্প নিয়ে আসলে ভালো হতো (হাসি)।
দেশে আসার পর কী হলো। আপনারা তো বীরবেশে এসেছেন…?
শান্ত : কুয়ালালামপুর থেকে শুনেছি ঢাকায় মানুষ মিছিল করেছে প্রতিটি পাড়া ও মহল্লায়। আর আমাদের বরণ করে নিতে সবাই এয়ারপোর্টে আসছেন। আমরা দেশে ফিরলাম। এয়ারপোর্টে মানুষ আর মানুষ। সেই সংসদ ভবন পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে সবাই দাঁড়িয়ে আমাদের অভিনন্দন জানান। এমন দিন জীবনে আসবে কল্পনা করিনি। আমরা আইসিসি ট্রফি জেতার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও আমরা আন্তরিক ছিলাম, যা পেয়েছি সেটি নিয়ে খুশি ছিলাম। বোর্ডের তখন সামর্থ্য ছিল না। কোনো মোহ বা জনপ্রিয়তার জন্য আমরা ক্রিকেট খেলিনি। বাংলাদেশের মানুষ এক নামে সেদিন থেকে আমাকে চেনে। এটা বড় পাওয়া। আজ বাংলাদেশ অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে। এই অবস্থানে ক্রিকেট দেখে আমার বেশ ভালো লাগছে। আকরাম খান আমাদের অধিনায়ক ছিলেন। আমরা একটা পরিবারের মতো ছিলাম। আমরা যে জন্য ক্রিকেট খেলেছি, সেটি সার্থক হয়েছে। আজ বাংলাদেশ অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে।
বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফিতে সফল হওয়ার পর বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। আপনারা কি প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিলেন?
শান্ত : আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ আগেও চেষ্টা করেছে। তবে ১৯৯৭ সালে সফল হয়। প্রত্যাশা তো অবশ্যই ছিল। আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা পারব। পুরো দলটি একটি ইউনিট হয়ে খেলেছে। এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
আপনি তো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। তরুণদের দেখে কেমন লাগে আপনার। এখন তো অনেকে জিমেও যায়। আপনারা কি এসব পেয়েছেন?
শান্ত : আমাদের সময়েও জিমনেশিয়াম ছিল। তবে এত কিছু ছিল না। আমি খুব যেতাম না। বোলিং স্কিলে মনোযোগ ছিল। এখন তো ছেলেরা জিমে যায় তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী। আমার কাছে যুবদলের বিশ্বকাপ জয় আরেকটি অর্জন। ওদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে খুব আনন্দ পেয়েছি। ওদের অনেকে এখন জাতীয় দলে খেলে। আকবর, মাহমুদুল হাসান জয়, শরীফুল ইসলাম, সাকিব, অভিষেক দাস, শামীম হোসেন ও তাওহিদ হৃদয় সামনে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। আমার কাছে এই আনন্দ অন্যরকম।
বাংলাদেশে কোচ অ্যালান ডোনাল্ড পেস বোলারদের নিয়ে কাজ করছেন। তাসকিন-এবাদত ভালো করছে। বাংলাদেশের পেসাররা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবে এ স্বপ্ন দেখেন কিনা?
শান্ত : ডোনাল্ড একজন কিংবদন্তি। খুব আন্তরিকতার সঙ্গে ছেলেদের তৈরি করছে। আমি স্বপ্ন দেখি না, বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ তাসকিন, এবাদত, মাহমুদকে নিয়ে অনেক সামনে যাবে। তাসকিন খুব পরিশ্রম করেছে। চোট ওর ক্যারিয়ারে সমস্যা সৃষ্টি করে কয়েকবার। তার পরও বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পরিশ্রম করতে হবে। পিচ রিডিং করাটা জরুরি। এখন ক্রিকেটে পেস বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসে আছে। আপনাকে প্রতিদিন কাজ করতে হবে। এবাদত বাহিনীতে আছে। আগে থেকেই পরিশ্রম করা অভ্যাস ওর। আর হাইট বা স্বাস্থ্য একেবারে পারফেক্ট।
ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। আপনার কেমন লেগেছে তখন?
শান্ত : বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারানোর স্বাদ অন্যরকম। আমি অবাক হয়েছি। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ভালো করছে। এটার এখন ধারাবাহিকতা দরকার।
ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ এ বছর। বাংলাদেশকে নিয়ে কতটা আশাবাদী আপনি?
শান্ত : আমি আশাবাদী মানুষ। বাংলাদেশ মানসিকভাবে যেন দৃঢ় থাকে। ভারতের মাঠে খেলা যে কোনো দলের জন্যই চাপ। এই চাপকে জয় করতে হবে।