বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চ ব্যবসায় ধস

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


ধস নেমেছে বরিশাল-ঢাকা রুটে লঞ্চ ব্যবসায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রী সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এলেও সম্প্রতি তার সংখ্যা অনেকটা তলানিতে ঠেকেছে। ফলে লাভ তো দূরের কথা, আয়-ব্যয়ের হিসেব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন লঞ্চ মালিকরা। এ কারণে প্রতিদিন লোকসানের পরিমাণও বিশাল অঙ্কে গিয়ে ঠেকছে।

এ অবস্থায় সীমিত পরিসরে লঞ্চ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ফের রোটেশন প্রথা চালু করেছেন মালিকরা। সে হিসেবে পাঁচ দিন পর একটি আপডাউন ট্রিপ পাচ্ছে লঞ্চগুলো। তবে এতেও শেষরক্ষা হচ্ছে না তাদের। স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং তুলনামূলক নিরাপদ হওয়ায় বরিশাল-ঢাকাগামী যাত্রীদের একসময় প্রথম পছন্দ ছিল নৌপথ।

ঈদ-কোরবানি তো বটেই, সাধারণ সময়ও এ রুটের লঞ্চের একটি কেবিন টিকিট পেতে হিমশিম খেতে হতো যাত্রীদের। ‘সরকারি চাকরি পাওয়ার চেয়েও বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চের কেবিন টিকিট পাওয়া কঠিন’ এমন প্রবাদও ছিল বরিশালে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণের সড়ক পরিবহনে জোয়ার এসেছে। উল্টো হোঁচট খেয়েছে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ ব্যবসা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রথম দিকে লঞ্চের প্রায় অর্ধেক যাত্রী কমে যায়। তখন লঞ্চ মালিকরা বলেছিলেন, উৎসুক মানুষ পদ্মা সেতু দেখতে যায়। এ কারণে লঞ্চ বাদ দিয়ে তারা সড়কপথে যাতায়াত করে। তবে পদ্মা সেতু দেখা শেষ হয়ে গেলে যাত্রীরা আবারও লঞ্চে যাতায়াত করবে বলে মন্তব্য ছিল লঞ্চ মালিকদের।

তবে দিন দিন লঞ্চের যাত্রী তলানিতে ঠেকেছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর খুব কমসংখ্যক ট্রিপে লাভ করতে পেরেছেন লঞ্চ মালিকরা। এ অবস্থায়ও ঈদ-কোরবানিসহ বিশেষ বিশেষ উৎসবের আশায় তাকিয়ে ছিলেন লঞ্চ মালিকরা। ইদানীং লোকসানের ঘানি আরও বেড়েছে। লোকসানের কারণে অনেক মালিক তাদের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছেন।

সবশেষ গত সপ্তাহে বরিশাল-ঢাকা রুটে রোটেশন চালু করেছেন লঞ্চ মালিকরা। অর্থাৎ প্রতিদিন দুটি লঞ্চ ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশে এবং বরিশাল থেকে দুটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে চলাচল করবে। কিন্তু এতেও লোকসান কাটাতে পারছেন না তারা।

এমভি পারাবত-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল খান বলেন, বরিশাল-ঢাকা রুটে বর্তমানে ১০টি লঞ্চ চলাচল করছে। বাকি লঞ্চগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লোকসান ঠেকাতে গত সপ্তাহে মালিকরা আলাপ-আলোচনা করে প্রতিদিন দুটি করে লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে প্রতিদিন উভয় প্রান্ত থেকে দুটি করে লঞ্চ চলাচল করবে। সে হিসেবে পাঁচ দিন পর একটি আপডাউন ট্রিপ পাবে একটি লঞ্চ।

লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, কোনো রোটেশন নয়। বাঁচার তাগিদে সব লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে পারছে সে লঞ্চ চালাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে গতকাল সোমবার সকালে দুটি লঞ্চ বরিশাল এসেছে। দুটি লঞ্চেই যাত্রীর সংখ্যা ছিলো নগণ্য। এ কারণে লোকসান হয়েছে দুটি লঞ্চেই। একইভাবে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী গেছে একটি লঞ্চ। সেটিতেও যাত্রীস্বল্পতার কারণে লোকসান হয়েছে।

যাত্রীস্বল্পতার কারণে সুন্দরবন কোম্পানির একটি লঞ্চ গত চার দিন ধরে ঝালকাঠি ঘাটে বাঁধা রয়েছে। লঞ্চগুলো নিয়মিত ট্রিপ না পাওয়ায় কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যথাসময়ে বেতন না পেয়ে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বরিশাল-ঢাকা রুটে ২০টি লঞ্চ রয়েছে। রমজানের শুরুতে যাত্রীসংখ্যা কিছুটা কম থাকায় আপাতত প্রতিদিন দুটি করে লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

তবে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ট্রিপ দেওয়া হবে না এটা অনেকটা নিশ্চিত বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *