রোজা প্রভুভক্তির পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ। উদাহরণ কৃতজ্ঞতাবোধেরও। আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য সব কল্যাণের মূল। প্রভুর প্রেমবন্ধনে মন সজীব হয়। কৃতজ্ঞতায় ফসল ফলে। রোজায় মানুষ বারবার সেজদায় যায়। তেলাওয়াত তাসবিহ ও তওবায় আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে। রাতের আঁধারে দুহাত উঁচিয়ে আত্মসমর্পণ করে। অনুতপ্ত হৃদয়ে কাঁদে। দিনে খাবারের রকমারি আয়োজনের ব্যবস্থা থাকে, বান্দা মুখে তোলে না। নির্জন ঘরে যখন একা ক্ষুধা তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যায় তবু খায় না। প্রিয়জনদের সঙ্গে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসে থাকে আল্লাহর হুকুম না হওয়া পর্যন্ত খায় না। সাহরিতে স্বাদের খাবার রেখে দেয়, তুলে রাখে প্রভুর ভয় ও আনুগত্যের জন্য।
রোজা মানবমনে কৃতজ্ঞতাবোধেরও উদয় ঘটায়। মানুষ প্রভুর করুণাপ্রাপ্তির ঋণ স্বীকার করে কায়মনোবাক্যে। রোজায় মুমিন অন্যান্য মাসের তুলনায় স্বাচ্ছন্দ্যে নামাজ বাড়িয়ে দেয়। তারাবি তাহাজ্জুদ আওয়াবিন চাশতসহ নফল নামাজে ডুবে যায়। আর নামাজে আল হামদুলিল্লাহ আল্লাহর জন্য সব কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে শুরু হলেও পুরো নামাজজুড়েই আল্লাহর কৃতজ্ঞতা। কোরআন শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ ও বিশ্বাসী হও তাহলে শাস্তির প্রয়োজন নেই। -সূরা ইব্রাহীম আয়াত ৭
রাসুল সা. আরও বলেছেন, কৃতজ্ঞতা ইমানের অর্ধেক। শুয়াবুল ইমান ৪৪৪৮
মনে কল্যাণময় কাজের দৃঢ় ইচ্ছা, মুখে করুণাপ্রাপ্তির ঋণ স্বীকার, আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশই কৃতজ্ঞতার আদর্শিক রূপ।
মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তির সূত্র ধরেই আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের জন্ম নেয়। দেশ-দশ ও সমাজের কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই মহাশক্তির কৃতজ্ঞতার চর্চা হয়। বিপরীতে মানবজাতির বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন আমার বান্দাদের মধ্যে অকৃতজ্ঞের সংখ্যাই বেশি। রোজার এদিনে দেশ ও মানুষের ঋণ স্বীকারের মাধ্যমে বাঙালির মনে কৃতজ্ঞতাবোধের উদয় হোক।
মুদাররিস : শেখ জনূরুদ্দীন রহ. দারুল কোরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।