আট বছর আগে দুই ব্যাংক থেকে নেওয়া ১৪ লাখ টাকা ঋণে শাড়ির ব্যবসা শুরু করেছিলেন রংপুরের আরিফ। দোকান নিয়েছিলেন বঙ্গমার্কেটে, নাম রেখেছিলেন আরিফ বস্ত্রালয়। মাসে ভাড়া দিতেন আট হাজার টাকা। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্য নিয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন নিজের ব্যবসা। গত মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে গেছে সেই দোকান। গতকাল বুধবার সকালেও যখন ছাইয়ের স্তূপ থেকে আগুনের ফুলকি দেখা যাচ্ছে, খানিক পর পরই উড়ছে কালো ধোঁয়া, নাকে লাগছে পোড়া গন্ধ; তখন আরিফকে দেখা গেল ধ্বংসস্তূপের মাঝে বসে আছেন। হাতড়াচ্ছেন, হাতের ছাই ঝাড়ছেন আর বারে বারে চোখের কোণে জমা জল মুছছেন হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে।
এগিয়ে যেতেই জানালেন আরিফ থাকেন বাংলাদেশ মাঠের উল্টো দিকে একটি ফ্ল্যাটে। রংপুরে থাকেন মা-বাবা আর দুই বোন। ঢাকায় তার সঙ্গে থাকেন স্ত্রী আর দুই সন্তান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম আরিফ গত সোমবার রাতেও ঈদ সামনে রেখে দোকানে নতুন মাল তুলেছিলেন। আশা ছিল এবার ঈদের জমজমাট বেচাকেনার পর ছোট বোনের বিয়ে দেবেন। আগুনের লেলিহান শিখায় সব হারিয়ে নিঃস্ব আরিফের কাছে বঙ্গমার্কেট এখন শুধুই যেন স্মৃতি।
আরিফ বলেন, ‘সারা বছর বেচাকেনা হয় খুব কম। মূলত দুই ঈদেই বেচাকেনার ধুম চলে। তাই ঈদের আগে যে যত বেশি মাল স্টকে রাখতে পারে, তার ব্যবসা তত ভালো হয়। আমার শাড়ি, থ্রিপিসের দোকান। কয়েক দিন আগেই প্রায় ১২ লাখ টাকার মাল তুলেছিলাম। মূলত দেশের বাড়িতে ২০ লাখ টাকার একটি জমি বিক্রি করে টাকাটা ব্যবসায় ইনভেস্ট করেছিলাম। দুই বোনকে এখনো বিয়ে দিতে পারিনি। এবার ঈদের পর এক বোনের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। আমি এখন কীভাবে বোনের বিয়ে দেব?’
মঙ্গলবার সকালে যখন আদর্শ মার্কেট থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তার কিছুক্ষণ পর পরই খবর পান আরিফ। দোকানে থাকা প্রায় ৬০ লাখ টাকার মালামাল এবং নগদ তিন লাখ টাকা বাঁচানোর জন্য ছুটতে ছুটতে বঙ্গবাজার এলেও ততক্ষণে আগুনের লেলিহান শিখা আর কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। অনেক চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুকতে পারেননি তিনি। কাঁদতে কাঁদতে দেখেছেন তার রুটি-রুজি আর পরিবারের ভবিষ্যৎ পুড়ে ছাই হয়ে যেতে।
চোখের পানি মুছতে মুছতে আরিফ বলেন, ‘আমার আলাদা কোনো সঞ্চয় নেই। ব্যবসাই আমার সঞ্চয়। এখন এই পোড়া টিন আর ছাই ছড়া আমার কিছুই নেই। আমিসহ আমার এখানকার হাজার হাজার ব্যবসায়ী ভাই রাস্তায় নেমে গেছি। আমরা না পারব কারও কাছে হাত পাততে, না পারব নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে। পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যবসায় লাগিয়েছি। দুই ব্যাংকে ১৪ লাখ টাকা লোন আছে। এখন যে নতুন করে আবার শুরু করব সেই পুঁজিও নেই। ৪ তারিখেও আমি ব্যবসায়ী ছিলাম, এখন হয়ে গেছি পথের ফকির।’