রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আয়-রোজগারের একমাত্র মাধ্যম হারিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা। একদিকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ, অন্যদিকে সংসারের খরচের সংস্থান নিয়ে আহাজারি করছেন তারা। তাদেরই একজন মো. মিরাজ কাজী।
ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা আর সঞ্চয় দিয়ে তিল তিল করে ‘আল্লাহ্র দান’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করেন মিরাজ। আয়ের একমাত্র উৎস সেই প্রতিষ্ঠান, আজ আগুনে পুড়ে মাটিতে মিশে গেছে। গতকাল দোকানের সামনে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এ ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ৫২ লাখ টাকার পণ্য কিনে মজুদ করেছিলাম। কিন্তু কিচ্ছু নেই এখন। সব পুড়ে গেছে। এ ব্যবসা দিয়েই আমার সংসার চলত। আজ আমি নিঃস্ব। তিন ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে এখন পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
সব হারিয়ে আহাজারি করছিলেন ‘রাসেল গার্মেন্টস’-এর কর্ণধার মুরাদ হোসেনও। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিমিষে ভস্মীভূত হতে দেখে ভেঙে পড়েন তিনিও। মুরাদ বলেন, এটিই আমার উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ছিল। আমি জানি না এখন পরিবার নিয়ে কী করব। ঋণের টাকা কোথা থেকে পরিশোধ করব। আদতেও দোকানের জায়গাটা আবার বুঝে পাব কিনা তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।’
মিরাজ ও মুরাদের মতো সব হারিয়ে আজ নিঃস্ব এখানকার বিলাল হোসেন, শামসুল ইসলাম, ইয়াসিন মোল্লাসহ হাজার হাজার ব্যবসায়ী। এদের বেশিরভাগই ঈদের বাজার উপলক্ষে ঋণ করে বাড়তি পণ্য তুলেছিলেন দোকান ও গুদামে। সব কিছু পুড়ে যাওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দোকানগুলোর কর্মচারীরাও। এমনই এক কর্মচারী মো. জাবের আলী।
তিনি বলেন, ‘মালিকের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। মালিক আবার দোকান দিবে কিনা জানি না। না কি অন্য কোনো কাজের জোগাড় করতে হবে- কিছুই বুঝতেছি না। একবেলায় সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের।’
গতকাল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৬টা ১২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মোট ৪৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দল যোগ দেয়। আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয় হেলিকপ্টারও। পরে দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ছয়টি মার্কেটের পাঁচ থেকে ছয় হাজার দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এনেক্সকো টাওয়ারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের সব পুড়ে গেছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ঈদের আগে সব দোকানে প্রচুর মালামাল তোলা হয়েছিল, যা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ছাড়া এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ কর্মরত ছিলেন। তাদের জীবিকাও এখন অনিশ্চিত।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘এখানে যারা ব্যবসা করেন, তারা ব্যাংকঋণ নিয়ে আবার ব্যবসায় ফিরতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা কম। তাদের জন্য সরকার থেকে থোক বরাদ্দের দাবি জানাব আমরা, যাতে ব্যবসায়ীরা দ্রুত এখানে নতুন করে ব্যবসা শুরু করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টাটা অন্তত করতে পারেন।’