নওগাঁয় ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করেছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা) মো. এনামুল হক। র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর একদিন পর এ মামলা করেন তিনি। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় চাঁদপুরের আল আমিন নামের এক যুবককে। র্যাব তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তবে আল আমিনকে ঘিরে রহস্য শেষই হচ্ছে না।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আল আমিন একজন হ্যাকার। কিন্তু র্যাবের হাতে ঢাকায় আটক হওয়া আল আমিনের নতুন পরিচয় জানিয়েছে পুলিশ। তারা বলছে, আল আমিন মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের এজেন্ট। রাজধানী মালিবাগে তার বিকাশের দোকান আছে।
আল আমিনকে গত বুধবার নিজ দোকান থেকে আটক করে র্যাব-৩। পরে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাজাহানপুর থানায় সোপর্দ করা হয়। এই থানায় তার নামে কোনো মামলা ছিল না।
থানা থেকে বলা হয়েছিল, এনামুল হকের করা মামলার প্রধান আসামিই এই আল আমিন। ডিজিটাল নিরাপ্তা আইনের ওই মামলায় তাকে এ পর্যন্ত রাজশাহীর রাজপাড়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে এজাহারে উল্লিখিত আল আমিন আর ঢাকায় আটক আল আমিন একই ব্যক্তি কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘র্যাবের হাতে আটক আল আমিনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। কিন্তু আমার থানার অধীনে মালিবাগে নাকি তার বিকাশের দোকান আছে। এই দোকান থেকেই তাকে আটক করা হয়। এ জন্য র্যাব আসামিকে এই থানায় দিয়েছে।’
ওসি বলেন, ‘র্যাব আল আমিনকে এই থানায় দিলেও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না। পরে সন্দেহজনক অপরাধী হিসেবে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে আল আমিনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা আছে। তাকে গ্রেপ্তার করে রাখার বিষয়টি আমরা রাজপাড়া থানায় জানিয়েছি।’
এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র, অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘যুগ্ম সচিব এনামুল হকের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আল আমিন গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না জানা নেই।’
ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রাজপাড়া থানার উপপরিদর্শক এসআই সুভাস চন্দ্র বর্মণ জানিয়েছেন, এনামুল হকের করা মামলার প্রধান আসামি আল আমিনকে আটকের কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে।
গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র্যাব। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নওগাঁয় এবং পরে রাজশাহীর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যুগ্ম সচিব এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সঙ্গে নিয়েই জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর যখন জেসমিন মৃত্যুশয্যায়, তখন পরদিন তাকে দুই নম্বর আসামি করে থানায় মামলা করেন এনামুল হক। তার ফেসবুক হ্যাকার এই মামলার প্রধান আসামি করা হয় আল আমিনকে।
মামলার এজাহারে যুগ্ম সচিব এনামুল হক লেখেন, আল আমিন ও জেসমিন তার ছবি ব্যবহার করে এনামুল হক নামেই ফেসবুক আইডি খোলেন এবং এই আইডি থেকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। পরে এনামুল হক বলেন, নতুন আইডি খোলার ব্যাপার নয়, তার আইডি হ্যাক করেছিলেন আল আমিন। আল আমিন যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেসবুক থেকে জেসমিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন।
এদিকে, একজন বিকাশের দোকানি কীভাবে ফেসবুক আইডি হ্যাক করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে র্যাব দাবি করেছে, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে চাকরি প্রত্যাশীদের সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ স্বীকার করেছেন আল আমিন।