চাঁদাবাজি ও প্রণনাশের হুমকির মামলার পর প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলা করেছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। আজ সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তিনি এ মামলা করেছেন।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত শাকিব খানের জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। শাকিব খানের আইনজীবী খায়রুল হাসান এ তথ্য জানান। এর আগে এদিন দুপুর পৌনে একটার দিকে মামলা করতে আদালতে আসেন এই নায়ক।
তার আগে গত ২৩ মার্চ চাঁদা দাবি, হত্যার হুমকির অভিযোগে মোহাম্মদ রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে সিএমএম আদালতে মামলা করেন শাকিব খান। সে মামলা আমলে নিয়ে আসামিকে ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন।
সেদিন সিএমএম আদালতে মামলার পর দুপুর ১২টার দিকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মানহানির এ মামলা করতে যান শাকিব খান। কিন্তু সেদিন মামলা দায়ের করার সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় সোমবার মামলা করতে আসতে পরামর্শ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী সোমবার তিনি আদালতে মামলা করতে আসেন।
সিএমএম আদালতে মামলার ন্যায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাদী শাকিব খান রানা বাংলাদেশের তথা ভারতীয় উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নায়ক। বাংলাদেশসহ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য দর্শকনন্দিত বাংলা সিনেমা উপহার দিয়ে দুই বাংলার অসংখ্য মানুষকে চিত্ত বিনোদন দিয়ে আসছেন। বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পর পর দুবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র জগতে উক্ত বাদীর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চার বার দেশ-বিদেশে পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্যবার পুরস্কৃত হয়েছেন।
তিনি বাংলাদেশের অনেকগুলো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের দেশ বিদেশে সুনাম বৃদ্ধির জন্য ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছেন এবং বর্তমানেও কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন অর্জন দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে আসামি একজন ঠগ, প্রতারক, পেশাধর ভুয়া প্রযোজক এবং বিদেশের মাটিতে চাঁদাবাজ বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণকারী, পরনিন্দাকারী, অন্যের কুৎসা রটনাকারী ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তি বটে।
বাদী ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক ছবিতে অভিনয় করতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ভারটেক্স মিডিয়া’র স্বত্বাধিকারী মো. জানে আলমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি মোতাবেক ছবির নায়িকা হিসেবে বাদীর বিপরীতে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়।
ছবির শুটিংয়ের জন্য বাদী ২০১৬ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ায় যান। সেখানে যাওয়ার পর বাদী জানতে পারেন ছবিতে আগে থেকে মনোনীত নায়িকা শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া আসতে পারেননি। তার বদলে অ্যানি সাবরিন নামের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক এক নারীকে ছবির নায়িকা হিসাবে তার সঙ্গে অভিনয় করার জন্য আসামি মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বাদীকে অনুরোধ করলে বাদী তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে সবিনয়ে নাকচ করে তার সিদ্ধান্ত অটল থাকেন।
মামলার বাদী অত্যন্ত সহজ-সরল, তাই উক্ত ঘটনা বাদীর মনে না থাকলেও আসিামি বাদীকে ফাঁদে ফেলার জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রের নীল-নকশা প্রণয়ন করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় আসামি বাদীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে বাদী রিফ্রেশমেন্টের জন্য একটি নামি-দামি ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। বাদী সরল বিশ্বাসে আসামির প্রস্তাবে রাজি হয়ে একদিন শুটিং শেষে আসামির সঙ্গে ক্লাবে যান। ক্লাবে গিয়ে বাদী অ্যানি সাবরিনসহ আরও ২-৩ জন অপরিচিত লোককে দেখতে পান।
বাদী অত্র মামলার আসামিসহ অন্যান্যদের সঙ্গে একসঙ্গে ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন। একপর্যায়ে বাদী অসুস্থবোধ করলে তিনি হোটেলে ফেরত আসার সময় আসামি এবং অন্য ২-৩ জন লোককে খুঁজে না পেয়ে অ্যানি সাবরিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গভীর রাতে হোটেলে ফেরত আসতে গেলে তিনি বাদীকে বলেন, ‘আপনি চলেন, অসুস্থবোধ করছেন যেহেতু আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি।’ বাদী অনেকটা নিরুপায় হয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে হোটেল রুমের উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে বাদী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান।
ওই ঘটনার পরদিন সকাল বেলা মামলার আসামি বাদীকে ফোনে জানান যে, ‘তুমি রাতে উক্ত নারীর সঙ্গে কী করেছ? সব কিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে ১ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা না দাও তাহেল আমি সমস্ত ভিডিও ক্লিপ এবং অ্যানি সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছ গিয়ে তোমার নামে কমপ্লেইন করব এবং তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।’
এইরকম বিভিন্ন ভয়ভীতির একপর্যায় তখন বাদী ভয় পেয়ে যান। বাদী তখন ভাবেন যে, ‘যেহেতু আমি অজ্ঞান ছিলাম সেহেতু তারা আমার সঙ্গে এমন কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বাদী ভয়ে তখন আসামিকে বলেন, ‘আমার কাছে তো এত ডলার নেই। আমি তোমাকে এত টাকা দেব কীভাবে?’ আসামি তখন প্রতি-উত্তরে বলেন, ‘বড়লোক, তোমার অনেক টাকা আছে। টাকা না থাকলে বাংলাদেশ থেকে টাকা আনাও। যদি আমার দাবিকৃত ডলার পরিশোধ না কর, তাহলে সমস্ত ভিডিও ক্লিপ আমি মিডিয়াতে দিয়ে দেব এবং ভিডিও ক্লিপসহ অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের কাছে অভিযোগ করব। তাতে তোমার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।’
তখন বাদী ভয়ে এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে ভয় পেয়ে আসামি রহমত উল্ল্যাহকে বাদীর কাছে থাকা ৫ হাজার ৫০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেন। তারপর আসামি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখালে এই পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকায় সর্বমোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা হিসাবে দিয়েছেন বাদী। আসামি চাঁদা চাওয়া অব্যাহত রাখলে বাদীর কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় পরবর্তীতে চাঁদা দিতে না পারায় বাদীকে জানানো হয় যে, ‘তোমার নামে অস্ট্রেলিয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।’
পরবর্তী সময়ে বাদী পুনরায় ২০১৮ সালে উক্ত ছবির শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়ায় গেলে আনুমানিক গত ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ তদন্ত করে বাদীর কোনো অপরাধের প্রমাণ না পেয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা বাদীকে জানায় যে, ‘মিস্টার খান, এটি একটি হানি ট্রাপ। আপনি এদের থেকে দূরে থাকুন।’
তখন বাদী বুঝতে পারে আসামি বাদীকে মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাদীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তারপর থেকে বাদী আসামিকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে আসামি রহমত উল্লাহ বিভিন্ন জায়গায়, ইলেক্ট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং বাদীর পরিবারের সদস্যদের কাছে বাদীর নামে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন।
সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টায় দিকে উক্ত ঘটনায় মীমাংসার কথা বলে ঢাকার গুলশানস্থ স্প্যারো নামক একটি রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে অত্র আসামি বাদীর কাছে ১ লাখ ডলার পুনরায় চাঁদা দাবি করেন। আসামি বলেন যে, ‘যদি উক্ত ১ লাখ ডলার চাঁদা না দিস তাহলে তোর মাথা আর ঘাঁড়ে থাকবে না এবং তোর ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেব’ বলে হুমকি দেন। ফলে বাদী এখন এক প্রকার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।