ঢাকা: কোরিয়ান প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাংকে ধরে রাখতে ‘বিশেষ’ সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে সরকার। এই বিশেষ সুবিধার আওতায় আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের সীমা বৃদ্ধি এবং স্বল্পমূল্যে অফিস স্পেস পেতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।
গত মাসে এক বৈঠকে স্যামসাং আইসিটি বিভাগের অধীনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছে এসব সুবিধা চায়।
স্যামসাংয়ের মতো অন্যান্য বিদেশি বড় কোম্পানিগুলো যাতে বাংলাদেশ ছেড়ে প্রতিবেশি ভারতে চলে না যায় তার জন্যই সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানায়, বিনিয়োগ ও কার্যক্রম সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের বাজার থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্যামসাং। বিষয়টি তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে আসলে তিনি কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত ও স্যামসাং প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রতিমন্ত্রী তাদের সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এরই অংশ হিসেবে কোম্পানিটিকে বিশেষ কিছু সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে সুবিধা প্রদানের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনানুযায়ী, কোনো ব্যক্তি দিনে ১০০ ডলার এবং সর্বোচ্চ ১ হাজার ডলারের বেশি অনলাইন লেনদেন করতে পারে না। বৈঠকে স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্যামসাং কর্মকর্তাদের জন্য এটি একটি বাধা। কারণ দেশের বাইরে থেকে গবেষণা সংশ্লিষ্ট নানা উপকরণ কিনতে তাদের আরো অনেক বেশি লেনদেনের প্রয়োজন হয়।
স্যামসাং আরো জানায়, তাদের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আরএনডি) গবেষণা সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, সেমিনার, কর্মশালা দেশে ও দেশের বাইরে হয়ে থাকে। এজন্য প্রায়ই তাদের বিদেশে যেতে হয়। কিন্তু আর্থিক বিধিনিষেধের কারণে তারা সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ নিতে পারেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিমালা অনুযায়ী, কেউ বিদেশে সভা-সেমিনারে গেলে সার্কভুক্ত দেশে প্রতিদিন ২০০ ডলার ও অন্যান্য দেশে ২৫০ ডলার খরচ করতে পারে এবং সে অনুযায়ী টাকা সঙ্গে নিতে পারবে। এই বিধির কারণে স্যামসাং প্রতিনিধিরা সমস্যার সম্মুখীন হন।
এছাড়া ভবন ভাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় বেশি হওয়ার কারণে ওয়ার্ক অর্ডার বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে বেশি চলে যাচ্ছে বলেও তারা উল্লেখ করে।
তাদের এই সমস্যার কথা শুনে আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত মে মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে স্যামসাংয়ের সমস্যার কথাগুলো তুলে ধরে তা সমাধানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। অর্থমন্ত্রী তা বিবেচনা করার কথাও জানিয়েছেন বলে জানানো হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, স্যামসাংয়ের লেনদেন সীমার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিতে। এক্ষেত্রে দৈনিক এক হাজার ডলারের পরিবর্তে স্যামসাংয়ের চাহিদা অনুযায়ী কেনাকাটার জন্য বার্ষিক ২ লাখ ডলার লেনদেন করার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়।
একই সাথে বৈদেশিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্যামসাং প্রতিনিধিদের ৫ হাজার ডলার সীমাবদ্ধ না রেখে কতদিন অবস্থান করবে সেই হিসেবে ডলার বহনের অনুমোদন প্রদানের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়।
আইসিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য রাজি হয়েছেন এবং শিগগিরই স্যামসাংয়ের সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং এই বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।