বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে শূন্য ভর্তুকি নীতি বাস্তবায়নে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। ফলে আবাসিক থেকে ক্ষুদ্র শিল্প, বাণিজ্যিক কিংবা সেচ- সব খাতই পড়ছে সীমাহীন সঙ্কটে।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা করছেন রবিউজ্জামান। এই সময়ে, বড় হয়েছে ব্যবসার পরিধি। কর্মসংস্থান এবং বেচাবিক্রির বিচারেও এগিয়েছেন বেশ খানিকটা। কিন্তু বর্তমানের মতো চাপে পড়তে হয়নি কখনোই।
আশুলিয়ার অবস্থিত তার চামড়ার কারখানায় বছর খানেক আগে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে গেলে সঙ্কট বাড়তে থাকে। যার প্রভাবে, এখনো লম্বা সময় ভুগতে হচ্ছে লোডশেডিংয়ে। সাথে, প্রতি মাসের সমন্বয়, বাড়িয়েছে পণ্যের উৎপাদন খরচ।
রবিউজ্জামান বলেন, আগের থেকে জেনেরেটরের খরচ বেড়ে যাচ্ছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। এর পুরটাই আমাদের অতিরিক্ত খরচ।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানী তেলের পাশাপাশি যদি বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকে তবে সব কাঁচামালেরও দাম বেড়ে যাবে। এতে শুধু উৎপাদন খরচ বাড়বে তা না সব খরচই বেড়ে যাবে, সেই সঙ্গে আমরা বিপদে পরে যাব।
আবাসিক গ্রাহকদের পাশাপাশি, বিদ্যুতের ধারাবাহিক দামবৃদ্ধিতে বড় সঙ্কটে পড়েছে রবিউজ্জামানের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা। ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা নিয়ে। এমন অবস্থায় ব্যবসা গুটানোর চিন্তাও করছেন কেউ কেউ।
হিসাব অনুযায়ী, গেলো দুই মাসে, ক্ষুদ্রশিল্পে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম, সোয়া আট টাকা থেকে চলে গেছে ১০ টাকায়। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে, ১০ টাকার বিদ্যুৎ কিনতে হবে প্রায় ১২ টাকা দরে। অর্থাৎ, গড়ে দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। অথচ, অর্থনীতির সিংহভাগ জায়গা এখনো দখলে রেখেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম বলেন, মানুষের আয় তো বাড়েনি অথচ ব্যয় একাধারে বেড়েই চলছে। এমন অবস্থায় বিদ্যুতের দাম যদি প্রতি মাসে ক্রমাগত বাড়িয়ে দেয়া হয় তবে সেটা ধারণ করার ক্ষমতা এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের থাকবে না। তারা একদম নুইয়ে পড়বে। একটি জনবান্ধব সরকারের দায়িত্ব এই জিনিসটা দেখা, যেখানে এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া যাবে না যেখানে জনগণ চরম সংকটে পরে।
তিনি মনে করেন, ভর্তুকি তুলে দেয়ার চিন্তা থেকে সরে না এলে, বড় খেসারত দিতে হবে সরকারকে।
পিডিবির হিসাবে, বর্তমানে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকা। যা গড়ে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭ টাকায়। এই ভর্তুকি শূন্যে আনতে ধারাবাহিক সমন্বয় অব্যাহত রাখার চিন্তা করছে সরকার।