ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে বেশি দামে বাংলাদেশ কয়লা বিদ্যুৎ কিনবে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে যে দামে বিদ্যুৎ কেনা হবে, একই দামে কেনা হবে আদানি গ্রুপ থেকেও। কারণ সবাই আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কয়লা কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে চীনা অর্থ ও কারিগরি সহযোগিতায় নির্মিত ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এমন কথা বললেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আমরা যাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেব-এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট, আদানি গ্রুপ, পায়রা কিংবা রামপাল- সবার থেকে একই দামে নেব। আপনি যদি এক মাস আগের দাম ধরেন তা হলে একরকম, এক মাস পরে হলে আরেক রকম। তবে সব কয়টার দাম সমতুল্য হবে। জ্বালানির (ফুয়েল) দামের ভিত্তিতে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হবে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম ওঠানামার সঙ্গে দেশে বিদ্যুতের দামও ওঠানামা করবে।
সামনের গরমের মৌসুমে লোডশেডিং কমবে কিনা গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, আজ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক, কাল থেকে লোডশেডিং থাকবে না। যুদ্ধ বন্ধ না হলে উপায় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমাদের সাশ্রয়ী হতে
হবে। এ কথা আমরা বারবার বলছি। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজিসহ জ্বালানির দাম সহনশীল হলে, কয়লার দাম সহনীয় থাকলে আমাদের বিদ্যুতের অভাব হবে না। এ মুহূর্তে আমাদের বিদ্যুতের দরকার ১৬ হাজার মেগাওয়াট, উৎপাদন ক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং মহেশখালী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে উৎপাদন শুরু হলে আমাদের সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে।
এর আগে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের বাংলাদেশি মালিক এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ লাবু বলেন, বেসরকারি খাতে এটি দেশে সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। আগামী এপ্রিল নাগাদ এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে। মে মাসে একটি ইউনিট থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। জুন থেকে দুটি ইউনিটই পুরোদমে চালু হবে। মার্চে ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০ হাজার টন কয়লা আসবে। এর পর আসবে দুই লাখ টন। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আমাদের ১৫ বছরের চুক্তি হয়েছে। তবে বিকল্প দেশ হিসেবে কয়লা আমদানি করা হবে অস্ট্রেলিয়া থেকে। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ববাজারের কয়লার দাম হিসেবে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম ৯ টাকার কম হবে। আবদুস সামাদ লাবু বলেন, দুটি ইউনিট চালু হওয়ার পর আমাদের প্রত্যাশা আছে- প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি দেখতে আসবেন।
এ সময় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানা দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের। চীনের অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের নাম সেপকো থ্রি।
গতকাল রবিবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটেরই ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ দিকে। কয়লা রাখার জন্য দুটি শেড নির্মাণ হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরে জেটি নির্মাণও শেষ। সেখান থেকে সরাসরি কয়লা চলে আসবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৮৫ মিটার চিমনিটি অনেক দূর থেকে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অস্তিত্ব জানান দেয়। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে। চিমনি অনেক উঁচু হওয়াতে এর ধোঁয়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে না। প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর এখানে ১২০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। তবে প্রকল্প নির্মাণের সময় কাজ করেছে ৭ হাজার মানুষ।