দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানার প্রাথমিক খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ রোববার এ খসড়া প্রকাশ করা হয়।
তবে প্রকাশিত খসড়ার বিষয়ে কারও আপত্তি থাকলে ১৯ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দিতে পারবেন। আবেদন পাওয়ার পর শুনানি করে চূড়ান্ত সীমানা পুননির্ধারণ করা হবে।
খসড়ায় দেখা গেছে, নতুন সিটি করপোরেশন হওয়ায় ময়মনসিংহ ৪ আসন, নতুন উপজেলা হিসেবে প্রশাসনিক এলাকার পুর্নবিন্যাস হওয়ায় মাদারীপুর ৩, সুনামগঞ্জ ১ ও ৩, সিলেট ১ ও ৩ এবং কক্সবাজার ৩ আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর মধ্যে কালকিনি উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনের সঙ্গে ডাসার উপজেলা যুক্ত করা হয়েছে। কালকিনি উপজেলা বিভক্ত করে সরকার কালকিনি ও ডাসার উপজেলা করেছে। ময়মনসিংহ-৪ আসনে ময়মনসিংহ সদর আসনের সঙ্গে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে যুক্ত করা হয়েছে।
ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসন ধর্মপাশা ও মধ্যনগর করায় মধ্যনগরের নাম যুক্ত হয়েছে। জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের দক্ষিণ সুরমার নাম পরিবর্তন করে সরকার শান্তিগঞ্জ উপজেলা করার খসড়া সীমানায় এই অংশটুকু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন এবং তিনটি ইউপির আংশিক সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এ আসনে পরিবর্তন হয়েছে। এক্ষেত্রে খসড়ায় সিলেট-১ আসনে সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ২৭ নম্বর এবং ৩১ থেকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড ও সদর উপজেলা, একই কারণে সিলেট-৩ আসনে পরিবর্তন হয়ে সিটি করপোরেশনের ২৮ থেকে ৩০ ও ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে। কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা আসন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৩ আসনের সদর উপজেলা ভেঙে ঈদগাঁও নামে নতুন আরেকটি উপজেলায় করায় এই নামটিও যুক্ত হয়েছে ইসির খসড়া সীমানায়।
খসড়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খসড়ায় আসনের কাঠামোগত কোনো রদবদল নেই। এতে আগের এলাকাগুলোকেই বিদ্যমান সংসদীয় সীমানার মধ্যে রাখা হয়েছে; বদল হয়েছে শুধু উপজেলার নাম কিংবা ওই এলাকা সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঢুকে গেছে।
খসড়া সীমানায় প্রকাশে নির্বাচন কমিশন যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে তা হলো- প্রতিটি জেলার ২০১৮ সালে নির্ধারিত মোট আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা, প্রশাসনিক ইউনিট বিশেষ করে উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখণ্ডতা বজায় রাখা, ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌর এলাকার ওয়ার্ড একাধিক আসনে বিভাজন না করা, যেসব নতুন প্রশাসনিক এলাকা সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে তা অন্তর্ভুক্ত করা এবং ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যথাযথ বিবেচনায় রাখা।
ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংক্ষুব্ধ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে কোনো আসনের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনি এলাকার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত দিতে পারবেন। পরে প্রকাশ্য শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে বলে জানানো হয়েছে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়ার বিষয়ে কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রশাসনিক বিভক্তি যেগুলো হয়েছে সেখানে পুরনো নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া কোনো পরিবর্তন হয়নি। আইনে চূড়ান্ত জনশুমারি হতে হবে। কিন্তু সরকার জানিয়েছে তাদের চূড়ান্ত জনশুমারি করতে আরও বছর খানেক সময় লাগবে। এজন্য আমরা অপেক্ষা না করে তাদের খসড়াটাকে আমলে নিয়েছি ঠিকই। তবে আইনে জনসংখ্যার বিষয়টি থাকলেও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে প্রশাসনিক অখণ্ডতা ও ভৌগোলিক বিষয়গুলো। আমরা সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এজন্য কোনো পরিবর্তন আনিনি।’