নির্বাহী আদেশে দণ্ডাদেশ স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। এ অবস্থায় তিনি রাজনীতি করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনীতির মাঠে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, তবে রাজনীতি করতে পারবেন। আবার কেউ বলছেন, তার রাজনীতি করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, করতে পারবেন না রাজনীতিও।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যৌথসভা হয়। সেখানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া কি দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন? তিনি যে দণ্ডিত, কনভিক্টটেড, সেটা থেকে তিনি কি মুক্তি পেয়েছেন? যেটুকু পেয়েছেন, সেটা মানবিক কারণে। শেখ হাসিনার উদারতার জন্য এটা হয়েছে। কী জন্য? মানবিক কারণটা কেন? অসুস্থ মানুষকে মানবিক কারণে তার দণ্ড মুক্ত নয়, স্থগিত করা হয়েছে। অসুস্থ না হলে তিনি থাকতেন কোথায়? কারাগারে। ঠিক আছে? তাহলে দণ্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘মানবিক কারণ আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) মুক্তি পেয়েছেন। তা না হলে দণ্ডিত ব্যক্তি তো জেলে থাকবে। আর দণ্ডিত ব্যক্তি এটা নিয়ে তাদের (বিএনপি) সন্দেহ থাকলে ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে? নিশ্চয় তিনি (খালেদা জিয়া) ভ্যালিডেবল না, সেজন্য তাকে (তারেক জিয়াকে) এনে বসিয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই। তিনি জেলে থেকেও দল পরিচালনা করতে পারবেন, বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে পারবেন। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসাবে আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচনী আইনে যা আছে, তাই মানতে হবে। এখানে সরকার বা নির্বাচন কমিশনসহ কারও কিছু করার নেই।’
এদিকে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আইনি বাধা কোথায়, সেটা আগেও বলেছি। উনি নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ উনি দণ্ডিত। (তিনি) রাজনীতি করতে পারবেন না, এ রকম কথা তো কোথাও নেই।’
তবে খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে ‘বাস্তব’ অবস্থা বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘বাস্তব অবস্থাটা হচ্ছে, তার ভাই যে আবেদনটা করেছিলেন, তাতে বলা আছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার যদি আরও ভালো চিকিৎসা না হয়, তবে জীবন বিপন্ন হবে। তখন তাকে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী মানবতার খাতিরে সাজা স্থগিত করে মুক্তি দিয়েছিলেন। যিনি অসুস্থ, তিনি রাজনীতি করতে পারেন কিনা, সেটা আমি বারবার তখনো বলেছি, সেটা আপনারা দেখেন, বিবেচনা করেন।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বাভাবিক মানুষ মনে করে তিনি অসুস্থ, তিনি রাজনীতি করতে পারেন না। এটাই স্বাভাবিক পরিস্থিতি।’
এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতোই বলেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হলে নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। আর সরকার তাকে শর্তসাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা এবং বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে অবস্থান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনীতিও করতে পারেন না।’
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির আমাদের সময়কে বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ তার তো কনভিকশন আছে (দণ্ডাদেশ)। কনভিকশন থাকলে রাজনীতি কীভাবে করবে? তিনি তো জেলে (কাস্টডিতে)। একজন লোক জেলে থেকে কি রাজনীতি করতে পারেন? পারেন না।’
জেলে থেকেও তো অনেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন; খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বাধা কোথায়- এমন প্রশ্নে মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘কনভিকশন স্থগিত থাকলে কিংবা যাদের জেল হয় (মামলা আন্ডার ট্রায়াল), তারা নির্বাচন করতে পারে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন তো নির্বাহী আদেশে নিজের বাসায় আছেন, সে ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী বলেন, ‘কনভিকশন নিয়েই তো তিনি বাসায় আছেন। সরকার তার অসুস্থতার কারণে সহানুভূতি দেখিয়েছে, কিন্তু এতে তার কনভিকশন শেষ হয়ে যায় না।