গুলশান কার্যালয়ে ঠাণ্ডা লড়াই

Slider ঢাকা

79954_f1

 

 

ঠাণ্ডা লড়াই চলছে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে। এ লড়াইয়ে একপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও অপরপক্ষে প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও প্রভাব বলয় তৈরি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকেই সেখানে দায়িত্বরত কয়েকজন নেতা ও কর্মকর্তার মধ্যে চলছে টানাপড়েন। চলতি বছরের শুরুতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের সময় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতিবন্ধকতার কারণে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় দীর্ঘ তিন মাস চেয়ারপারসনের সঙ্গে কার্যালয়ে অবস্থান করেন তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল। তখন তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে দ্বিমত হলে পুরনো ঠাণ্ডা লড়াই নতুন মাত্রা পায়। সেখানে দায়িত্বরত প্রভাবশালী কয়েকজনের সঙ্গে মিডিয়া উইংয়ের দ্বন্দ্ব উঠে চরমে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর বাসভবনে ফিরে যান। এরপর থেকে কার্যালয়ে যাতায়াত কিছুদিন কমিয়ে দেন তিনি। খালেদা জিয়া বাসভবনে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন কার্যালয়ে যাননি মারুফ কামাল খান। গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ প্রায় বন্ধ থাকে। জানতে চাইলে, গুলশান কার্যালয় থেকে বলা হয়, প্রেস সচিব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সম্প্রতি খালেদা জিয়া আবারও প্রায়দিনই কার্যালয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু চেয়ারপারসন কার্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন মারুফ কামাল খান। মাঝে-মধ্যে তিনি কার্যালয়ে হাজিরা দিলেও তাকে আগের মতো সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। গণমাধ্যম কর্মীরাও প্রয়োজনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি প্রায় বন্ধ থাকছে। সম্প্রতি তিনি জানান, মামলায় হুলিয়া থাকার কারণে তিনি আপাতত বিচ্ছিন্ন আছেন। কিন্তু যে মামলার আসামির তালিকায় তার নাম রয়েছে একই মামলায় আসামি শিমুল বিশ্বাসসহ প্রেস উইংয়ে দায়িত্বরত দুই কর্মকর্তা। মারুফ কামাল খান বিচ্ছিন্ন থাকলেও তারা প্রত্যেকেই নিয়মিত চেয়ারপারসন কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কার্যালয়ের একপক্ষের সঙ্গে ঠাণ্ডা লড়াইয়ে জড়িয়ে ও শীর্ষ নেতৃত্বের নাখোশ মনোভাবের কারণে সেখানে যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছেন সোহেল। সূত্রগুলো জানায়, ঠাণ্ডা লড়াইয়ের অংশ হিসেবে গুলশান কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমানকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ডেকে নেয়া হয় আরেক সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনকে। কয়েকদিন পরেই শামীমকে ফের গুলশান কার্যালয়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তাকে ঘিরে এ অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়েও। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে গুলশান কার্যালয়ের গুটিকয়েক কর্মকর্তার ‘বিতর্কিত’ সিদ্ধান্তে চরম বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। চলতি বছরের শুরুতে তিন মাসের আন্দোলনে ওইসব প্রভাবশালী কর্মকর্তাই ছিলেন আন্দোলনের হর্তাকর্তা। প্রথমদিকে টেলিফোনে কথা বলা শুরু করলেও সুকৌশলে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন ওই প্রভাবশালী মহল। কার্যালয়ে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে যাতে নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে না পারেন। চেয়ারপারসনকে একনজর দেখা বা দু’একটি কথা শেয়ার করার জন্য গুলশান কার্যালয়ে এসে আক্ষেপ করে ফিরে যেতে হয় তৃণমূলসহ জেলা নেতাদের। কিন্তু কার্যালয়ের ওইসব প্রভাবশালী কর্মকর্তার পাশাপাশি কিছু সিএসএফ সদস্যের দুর্ব্যবহারের কারণে মনে কষ্ট নিয়ে তাদের ফিরে যেতে হয়। সিনিয়র নেতাদেরও বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের অভিযোগ গুলশান কার্যালয়ের সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের কারণে তৃণমূল বিএনপির আসল চিত্রও জানতে পারছেন না খালেদা জিয়া। কমিটি গঠন ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে নিতে পারছেন না সঠিক সিদ্ধান্ত। ওইসব কর্মকর্তার সঙ্গে যারা সমঝে চলেন গুলশান কার্যালয়ে তারাই পান বেশি কদর। দলের দুঃসময়ে কিংবা আন্দোলনে না থাকলেও তারাই সাক্ষাৎ পান খালেদা জিয়ার। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন এখন সরকার ও বিরোধী দলে নেই। তিনি এখন সংসদের বাইরে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে গণমাধ্যমের সঙ্গে যে ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার কথা তার প্রেস সচিব তেমনটি নন। গণমাধ্যমের প্রভাবশালীদের সঙ্গে যেমন তার যোগাযোগ কম, তেমনি মাঠপর্যায়ের গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও দূরত্ব গড়ে উঠেছে তার। এছাড়া সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসকে নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে খোলামেলা কথা বলেছেন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সহকারী প্রেস সচিব মহিউদ্দিন খান মোহন। তিনি সেখানে বলেছেন, যে শ্রমিক সংগঠনে আওয়ামী লীগ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সভাপতি সেই সংগঠনে শিমুল বিশ্বাস কি করে যুগ্ম সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *