গাজীপুর: টঙ্গীতে মাদকের আড্ডায় বাধা দেয়ায় কারখানার ম্যানেজারকে হত্যা করার সাত বছর পর গ্রেফতার হলো তিন আসামি। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পিবিআই গাজীপুর ইউনিট এ তথ্য নিশ্চিত করে। এর আগে মঙ্গলবার আসামিরা হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গ্রেফতাররা হলেন আজিজুল ইসলাম, হুমায়ন কবির ওরফে রোমান ও জাফর ইকবাল। আজিজুল টঙ্গী পূর্ব থানার এরশাদ নগর ৫ নম্বর ব্লকের ছোট বাজার মসজিদ গলির আলী আকবরের ছেলে। রোমান স্থানীয় ইসলামপুর (দত্তপাড়া) এস কে মান্নান রোডের মরহুম আব্দুল খালেক সরদারের ছেলে। জাফর একই এলাকার হাউজ বিল্ডিং ফাতেমা খানম রোডের আব্দুল হালিম চৌধুরীর ছেলে।
নিহত ম্যানেজারের নাম মো: হাসান (৪৫)। তিনি পিরোজপুর স্বরুপকাঠি থানার আব্দুল আউয়াল তালুকদারের ছেলে। প্রায় চার বছর ধরে দত্তপাড়া হাসান লেনের মাঈন উদ্দিন মিয়ার ফার্নিচারের কারখানায় তিনি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি রাতে ওই কারখানার ভেতরেই থাকতেন।
পিবিআই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি রাতে স্বজনরা হাসানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যায় না। পরে মালিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কারখানায় গিয়ে দেখেন, দরজায় বাইরের দিক থেকে তালা দেয়া। এ সময় তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতেই হাসানের রক্তাক্ত দেহ ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাবু তালুকদার অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ তিন বছর দুই মাস ২০ দিন তদন্ত করেও জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেনি। এরপর গাজীপুর সিআইডিও দুই বছর চার মাস তিন দিন চেষ্টা করে। তারাও অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি। অবশেষে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
গাজীপুর পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান (পিপিএম) পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধানে ও গাজীপুর পিবিআই ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মাকছুদের রহমানের সহযোগিতায় মামলাটি তদন্ত করে অবশেষে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।
মাকছুদের রহমান আসামিদের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গ্রেফতার আসামিরা মাদক সেবন ও বেচাকেনা করতেন। তারা সহযোগীদের নিয়ে প্রায়ই কারখানার আশপাশ এলাকায় মদের আড্ডা বসাতেন। কখনো আলোচিত ফার্নিচার কারখানার ভেতরেও ঢুকে পড়তেন।
ঘটনার দিন আসামিরা হাসানের কারখানায় প্রবেশ করতে চান। এ সময় হাসান তাদেরকে বাধা দিলেও জোরপূর্বক তারা প্রবেশ করেন। এরপর গালিগালাজ করে মাদক সেবন শুরু করে। হাসান তাদেরকে নিষেধ করেন। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করেন। একপর্যায়ে কারখানায় থাকা স্ক্রু-ড্রাইভার ও হাতুড়িসহ ফার্নিচার তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়েও আঘাত করেন। এতে হাসান অচেতন হয়ে পড়েন। তখন আসামিরা তাকে ভেতরে ফেলে রেখে তালা দিয়ে চলে যায়।