জোড়া খুন সাংসদপুত্রকে রক্ষা করার চেষ্টা!

জাতীয় ঢাকা

374a0861613178e4fb848cec39c1697a-21

 

তোয়ালে দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা বখতিয়ার আলমের। গতকাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে তাঁকে আদালতে নেওয়ার সময় তোলা ছবি l প্রথম আলোগভীর রাতে রাজধানীর রাজপথে এলোপাতাড়ি গুলি করে দুজনকে খুন করার ঘটনায় সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনিকে রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। গতকাল শনিবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নতুন করে রিমান্ডের আবেদনও করা হয়নি।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেন, বখতিয়ার স্বীকারোক্তি না দিলেও পুলিশের কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। জবানবন্দি না দিলেও মামলার ক্ষতি হবে না। কারণ, গাড়িচালক এই মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে বলেছেন যে বখতিয়ারের ছোড়া গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন।
তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বিবিসিকে বলেন, ‘ঘটনাটি কে ঘটিয়েছে এবং কীভাবে ঘটিয়েছে, তা নিয়ে আমরা এখনো স্পষ্ট ধারণা পাইনি। তিনি (বখতিয়ার) স্বীকার করেননি, তাঁর ড্রাইভার স্বীকারোক্তি দিয়েছে, আমি যতটুকু শুনেছি।’
ঘটনার পর পুলিশ আসলেই তদন্ত করেছে কি না কিংবা কাউকে ধরতে চেয়েছিল কি না অথবা ঘটনাটা ধামাচাপা পড়ে যাক, সে রকম চেয়েছিল কি না—এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ব্যাপারটা তা নয়। পুলিশ আইনি পথেই এগোচ্ছিল। পরে আরও কিছু বিষয়ে তাদের সন্দেহ হলে বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে সমর্পণ করা হয়। কাউকে রক্ষা করার জন্য, ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বা আড়াল করার জন্য বিলম্বিত করা হয়নি। সাংসদের পুত্র বা আওয়ামী লীগ, যুবলীগের কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে—এমন অভিযোগও নাকচ করে দেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
পুলিশ জানায়, গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি থেকে গুলি ছোড়েন আওয়ামী লীগের সাংসদ পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার। ওই গুলিতে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম নিহত হন।
হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল এ ঘটনায় রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস মামলাটি তদন্ত করছেন।
মামলা করার পর পুলিশ গত ৩১ মে বখতিয়ার ও তাঁর গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বখতিয়ারকে ৯ জুন চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গতকাল রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়।
আদালত সূত্র জানায়, পুলিশ বখতিয়ারকে আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে। এ সময় বখতিয়ারের পক্ষে জামিন চেয়ে ও চিকিৎসার জন্য দুটি আলাদা আবেদন করেন আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ। তবে শুনানির সময় বখতিয়ারকে আদালতে হাজির করা হয়নি। তাঁকে হাজতখানাতেই রাখা হয়।
আদালতে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, খুনের মামলায় গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, বখতিয়ার এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। যে গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়েছে, সেটির মালিক তাঁর মা। ওই গাড়িটি জব্দ করার চেষ্টা চলছে।
বখতিয়ারের আইনজীবী আদালতকে বলেন, এ মামলার আসামি বখতিয়ার অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। তিনি জামিনের বিষয়ে শুনানির জন্য সময় চাইলে আদালত ১৬ জুন তারিখ নির্ধারণ করেন। আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত চিকিৎসার জন্য কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *